নিজস্ব প্রতিবেদক:
মানুষের জীবন ভুল-ত্রুটি ও গুনাহ থেকে মুক্ত নয়। দুনিয়ার ঝলমলে চাকচিক্য, নিত্যব্যস্ত জীবনের আবর্তে অনেক সময় মানুষ অনিচ্ছাকৃতভাবে পথভ্রষ্ট হয়। তবে মহান আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা সীমাহীন। তিনি নিজেই বান্দাদের তাওবা করার এবং বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামি স্কলাররা বলেন, একজন মুমিনের পরিচয় হচ্ছে—সে গুনাহর পর অনুতপ্ত হয়, আল্লাহর দরবারে কাঁদে, ক্ষমা চায় এবং ফিরে আসে সৎপথে। কোরআনে কারিমের বহু আয়াতে আল্লাহ তাওবার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন এবং ক্ষমার সুসংবাদ দিয়েছেন।
বিশেষত, কোরআনের একজন মহান নবী ইউসুফ (আ.)-এর দোয়ায় আমরা দেখতে পাই, কীভাবে দুনিয়ার সম্মান ও সফলতার চূড়ান্ত শিখরেও তিনি নিজের সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছেন এবং বিনীতচিত্তে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। ইউসুফ (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশে দোয়া করে বলেন,
"হে আমার রব! তুমি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছ এবং তুমি আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ। হে আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা! দুনিয়া ও আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক। আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং নেককারদের দলে অন্তর্ভুক্ত করো" (সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০১)।
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউসুফ (আ.)-এর এই দোয়া আমাদের শেখায়—কেবল দুনিয়ার সফলতা নয়, বরং পরকালের মুক্তি ও নেককারদের সঙ্গই প্রকৃত কামনা হওয়া উচিত।
ইসলামী শিক্ষায় বলা হয়েছে, বান্দা যখন অন্তর থেকে নিজের গুনাহ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন। হাদিস শরিফে এসেছে,
"আল্লাহ তায়ালা তাঁর কোনো বান্দার তাওবায় এতটাই আনন্দিত হন, যেমন একজন ব্যক্তি নিজের হারিয়ে যাওয়া উট ফিরে পেয়ে খুশি হয়।" (সহীহ মুসলিম)
উলামায়ে কেরাম বলেন, বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করতে হবে, নিজের অপারগতা ও দুর্বলতা স্বীকার করতে হবে। কোনো রকম অহংকার বা গাফিলতি যেন না থাকে।
ইসলামী দর্শনে বারবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। এখানে সাময়িক সাফল্য মানুষের জন্য চূড়ান্ত গন্তব্য নয়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে—আখেরাতে মুক্তি লাভ করা এবং জান্নাতের অনন্ত সুখ অর্জন করা।
ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার জন্য দৈনন্দিন জীবনে সময় বের করে আত্মসমালোচনা করা, দোয়া-ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস শরিফে রয়েছে তাওবা ও ইস্তেগফারের অপরিসীম গুরুত্ব।
মহান আল্লাহর দরবারে কোনো সময় দেরি না করে তাওবা করা উচিত। যত গুনাহই হোক না কেন, অন্তর থেকে ফিরে এলে, অনুতপ্ত হলে, আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করেন এবং বান্দাকে তাঁর রহমতের ছায়ায় স্থান দেন। ইউসুফ (আ.)-এর দোয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর—নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে তাঁর দয়া ও মাগফিরাতের প্রত্যাশী হওয়ার অনুপম দৃষ্টান্ত।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.