প্রতি মাসে গড়ে ১২ জনের প্রাণহানি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা জারি
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আশুলিয়া
দেশে গণপিটুনি ও মব সহিংসতার ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) চার বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালে এ ধরনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ২৯ জন, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৬ জনে—মাত্র চার বছরে মৃত্যুহার বেড়েছে পাঁচগুণ। গত বছরই প্রতি মাসে গড়ে ১২ জনের বেশি মানুষ এ ধরনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছরে মব সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭৭ জন। শুধু গত বছরই জানুয়ারি থেকে জুলাই—প্রথম সাত মাসে নিহত হন ৪৭ জন। এরপর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর—মাত্র পাঁচ মাসে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ৯৯ জন, যা ওই বছরের মোট নিহতের ৬৬ শতাংশ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যও একই চিত্র তুলে ধরে। তাদের হিসাব মতে, ২০২৩ সালের প্রথম সাত মাসে নিহত হন ৩২ জন, আর বছরের শেষ পাঁচ মাসে নিহত হন ৯৬ জন—যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৭৫ শতাংশ।
এমএসএফের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে মবের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৯ জন। এর মধ্যে ঢাকাতেই প্রাণ গেছে ৪৫ জনের, চট্টগ্রামে ১৭ জন, বরিশালে ১১ জন, রাজশাহীতে ৪ জন, রংপুরে ৪ জন, ময়মনসিংহে ৩ জন, খুলনায় ৩ জন এবং সিলেটে ২ জনের।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর সাম্প্রতিক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৭১.৫ শতাংশ তরুণ মনে করে মব জাস্টিস সমাজে গভীর প্রভাব ফেলছে এবং এটি আইনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “যেখানে সরকার আছে, সেখানেও যদি মব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে না আসে, এটি চরম ব্যর্থতা। আইনের শাসন দুর্বল থাকা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত ভূমিকা না থাকা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই সহিংসতা বেড়েই চলেছে।”
তিনি আরও জানান, গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে—গণপিটুনি সাধারণত অপরিকল্পিতভাবে ঘটে, আর মব সহিংসতা হয় পরিকল্পিতভাবে কোনো দল বা গোষ্ঠীর মাধ্যমে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, “একসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা ভেঙে পড়েছিল, তখন মবের দৌরাত্ম্য বেড়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। কোথাও অপরাধের খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নাগরিকদের ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
রংপুরের তারাগঞ্জে ভ্যানচোর সন্দেহে রূপলাল দাস (৪০) ও তাঁর ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাস (৩৫) গণপিটুনিতে নিহত হন।
রাজধানীর মিরপুরে বাজার করতে গিয়ে পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান মব হামলার শিকার হন, তাঁর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার বাসায় গত ২০ জুলাই মব হামলার ঘটনা ঘটে, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মব সহিংসতার ঘটনা কমলেও সম্প্রতি কিছু এলাকায় তা আবার বাড়ছে। সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে, ভবিষ্যতে কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না।”
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.