দৈনিক আশুলিয়া
আশুলিয়া প্রতিবেদক:
ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে মানবপাচারের শিকার হওয়া বাংলাদেশের এক ১২ বছর বয়সী কিশোরী তিন মাসের মধ্যে অন্তত ২২৩ বার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। খুলনার আমিরপুরের ওই কিশোরীকে পাচার করে গুজরাটের নাদিয়াদ ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন হোটেল ও খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ এবং পুলিশের মানবপাচার রোধ ইউনিট যৌথ অভিযান চালিয়ে ২৩ জুলাই মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার নাইগাঁও থেকে কিশোরীটিকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া কিশোরী অভিযোগ করেছেন, তাকে জোরপূর্বক যৌন হেনস্তার মধ্যে ফেলা হয়েছিল।
হারমোনি ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্রাহাম মাথাই সাংবাদিকদের জানান, “কিশোরী যখন বলছিল যে তিন মাসে ২২৩ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে, তখন তার চোখ-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ছিল।”
মীরা-ভায়ান্দার-ভাসাই-ভিরার পুলিশের কমিশনার নিকেত কৌশিক বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং দুইজন নারী বাংলাদেশের নাগরিক। পুরো পাচার চক্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।”
পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বর্ণনা:
শ্যাম কুম্বলের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে জানা যায়, কিশোরীকে মুম্বাই থেকে গুজরাটে নাদিয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে শারীরিকভাবে পরিবর্তনের জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল, ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল এবং ভয় দেখিয়ে যৌন সংস্পর্শে বাধ্য করা হয়েছিল। তাকে চারটি হোটেল এবং পাঁচটি ভিন্ন খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদে আরও এক বাংলাদেশি কিশোরী নিজেরাই পুলিশের সাহায্য চেয়ে থানায় আসে। ঢাকার ওই ১৫ বছর বয়সী কিশোরী অভিযোগ করে যে, তার প্রতিবেশী তাকে কলকাতায় নিয়ে এসে যৌন ব্যবসায় জড়িয়েছে। হায়দ্রাবাদ পুলিশ দ্রুত অভিযানে নেমে আন্তর্জাতিক যৌনপাচারের চক্র ধ্বংস করে।
পাচারকারীদের কৌশল ও দাবি:
হারমোনি ফাউন্ডেশনের আব্রাহাম মাথাই বলেন, “কিশোরীকে প্রথমে বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়। এরপর পরিচিত নারীর মাধ্যমে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র বানানো হয় এবং মুম্বাই নিয়ে আসা হয়।” তিনি আরও বলেন, “পাচারকারীরা গ্রাহক এবং চক্রের সকল সদস্যদের কঠোর শাস্তি পাওয়া উচিত। একমাত্র তবেই বার্তা যাবে যে কিশোরীকে ক্ষতিসাধন করলে আইন কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবে।”
শ্যাম কুম্বল আরও জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে তার সংগঠনই মহারাষ্ট্রে ৫০-এরও বেশি বাংলাদেশি নারী ও কিশোরীকে উদ্ধার করেছে। “যদি আমাদের মতো একটি সংগঠন এতসংখ্যক কিশোরী উদ্ধার করতে পারে, তাহলে ভাবুন, দেশে কী পরিমাণে নারী ও কিশোরী পাচার হচ্ছে।”
মহারাষ্ট্রের বুধওয়ারপেটের যেসব যৌনপল্লীতে পশ্চিমবঙ্গের নারীর পাশাপাশি বাংলাদেশি নারীরাও পাচার হয়ে আসছে, তাদের রক্ষা ও উদ্ধার নিয়ে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.