দৈনিক আশুলিয়া
প্রকাশ: ০৮:১৩, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ধর্ম ও সমাজ ডেস্ক:
মানবিক আদর্শে আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তি জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। তিনি কুসংস্কার, গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িকতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যের শৃঙ্খল ভেঙে মানবমুক্তির বার্তা নিয়ে আসেন। মানুষের মর্যাদা ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি স্থাপন করেছেন বিশ্বজনীন দৃষ্টান্ত।
মহানবী (সা.) ঘোষণা দেন—জাতি, বর্ণ, ধনী-গরিব, প্রভু-ভৃত্য নির্বিশেষে সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। মানবজাতি একই আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর সন্তান এবং আল্লাহর বান্দা। তাঁর শিক্ষা সমাজে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি গড়ে তোলে।
৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর তিনি যে ঐতিহাসিক ‘মদিনা সনদ’ প্রণয়ন করেন, তা বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ হিসেবে বিবেচিত। এতে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে একই বিধিবদ্ধ আইনের আওতায় এনে পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। আধুনিক মানবাধিকার ঘোষণার বহু শতাব্দী আগে মহানবী (সা.) এই বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
বর্ণবাদ ও বৈষম্য দূরীকরণে তিনি রাখেন অনন্য দৃষ্টান্ত। কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস হজরত বিলাল (রা.)-কে মসজিদের প্রথম মোয়াজ্জিন নিযুক্ত করেন এবং আজাদকৃত গোলাম জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)-এর সঙ্গে কোরাইশ বংশীয় নারী জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর বিয়ে সম্পাদন করেন। এর মাধ্যমে সামাজিক আভিজাত্য ও বংশীয় অহংকারকে ভেঙে মানবতার ভিত্তিতে সমাজ গড়ার বার্তা দেন।
বিদায় হজের ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন, “আরবের ওপর অনারবের, অনারবের ওপর আরবের, শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কিংবা কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই—শুধু তাকওয়া ছাড়া।” একই সঙ্গে তিনি সম্পদ, জীবন ও মর্যাদা সুরক্ষার ঘোষণা দেন এবং সুদ, জুলুম ও গোত্রীয় অহংকারকে চিরতরে নিষিদ্ধ করেন।
মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণে খুলাফায়ে রাশিদিন যে সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তা ছিল মানবতা ও ন্যায়ভিত্তিক। শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থা যুগের পর যুগ অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।