দৈনিক আশুলিয়া
প্রকাশ: সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অনলাইন ডেস্ক
মদিনায় হিজরতের পর ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.) অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর অর্থনৈতিক নীতি ছিল বৈধ ও ন্যায্য উপায়ে আয়, সুদ ও মুনাফাখোরি থেকে বিরত থাকা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণির সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
বাজার ব্যবস্থাপনা ও লেনদেনের নীতি
মদিনায় নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করে নবী (সা.) সরাসরি এর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা তদারকি করতেন। বাজারে প্রতারণা, জুলুম, মাপে কম দেওয়া ও একচেটিয়া ব্যবসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। নীতি ছিল—‘না কোনো ক্ষতি, না কোনো প্রতারণা।’
ঋণ ও সুদবিরোধী সংস্কার
লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নবী (সা.) ঋণ লিখিতভাবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। ঋণ পরিশোধে ন্যায্যতা ও সদয় আচরণ নিশ্চিত করা হয়। একই সঙ্গে তিনি জাহেলি যুগের সব ধরনের সুদ বাতিল ঘোষণা করে অর্থনীতিকে অন্যায় প্রথা থেকে মুক্ত করেন।
নৈতিকতা ও কর্মপ্রবণতা
ইসলামী অর্থনীতিতে নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। সততা, আস্থা ও উদারতা লেনদেনের মূল নীতি ছিল। হাদিসে এসেছে—‘কেউ নিজের হাতে অর্জিত খাবার খাওয়ার চেয়ে উত্তম কিছু নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭২)
কৃষি, জমি ও সেচনীতি
মুহাজির-আনসাররা মদিনায় কৃষিকাজ ও উৎপাদনে সক্রিয় হন। নবী (সা.) ঘোষণা দেন—‘যে ব্যক্তি শূন্য জমি চাষ করে জীবিত করে, তা তার হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫০)
এ ছাড়া সেচব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপণ ও জল বণ্টনে সুশৃঙ্খল নীতি প্রণয়ন করা হয়।
বাণিজ্য ও শিল্পোন্নয়ন
কৃষির পাশাপাশি বাণিজ্য, পশুপালন ও কারুশিল্প মদিনার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। নবী (সা.) শ্রমিক ও কারিগরদের সততার সঙ্গে উপার্জনকে সর্বোত্তম আয়ের উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সামাজিক ন্যায় ও করব্যবস্থা
ধন-সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য মুসলমানদের ওপর জাকাত ও অমুসলিমদের ওপর জিজিয়া ধার্য করা হয়। এসব আয়ের মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহ করা হতো।
রাষ্ট্রীয় আয় ও তদারকি
নবী (সা.)-এর সময়ে রাষ্ট্রীয় আয়ের উৎস ছিল জাকাত, গনিমত, ফায়, জিজিয়া, দান ও ওয়াক্ফ, এবং প্রয়োজনীয় ঋণ। এসব আয় রাষ্ট্রীয় কোষাধ্যক্ষদের মাধ্যমে তদারকি ও স্বচ্ছভাবে বণ্টন করা হতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নবীযুগের এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শুধু তৎকালীন সমাজে সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেনি, বরং আধুনিক অর্থনৈতিক নীতির জন্যও একটি মডেল হয়ে আছে।