বিশেষ প্রতিবেদক | ১৮ মে ২০২৫
জীবনের পথচলায় শত্রুতা একটি সাধারণ বাস্তবতা। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনোভাবে শত্রু বা প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব থাকে। কেউ হয়তো ব্যক্তিগত হিংসা থেকে, কেউ আবার পেশাগত প্রতিযোগিতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়। তবে একজন মানুষের প্রকৃত শক্তি তখনই বোঝা যায়, যখন সে তার শত্রুকেও ভালো আচরণে জয় করে নেয়।
মানসিক, শারীরিক বা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও শত্রুতা মোকাবিলার সবচেয়ে উন্নত ও কার্যকর পদ্ধতি হলো ইতিবাচক ও শালীন আচরণ। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, আচরণের মাধ্যমেই বদলে দেওয়া যায় সম্পর্কের ধারা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শত্রুতা কখনোই চিরস্থায়ী নয়। মানুষের আচরণ ও মনোভাবই অনেক সময় শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি নীতিমূলক আচরণ এমন আছে, যা শত্রুতাকে দূর করে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম।
এটি শুধু একটি চারিত্রিক শিক্ষা নয়, বরং ব্যক্তিত্ব গঠনের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। কেউ অন্যায় করলে তার প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাকে সঠিক পথে ফেরানো যায়। একটি বিখ্যাত উপমা হচ্ছে—অন্ধকারকে দূর করতে আলো জ্বালাও; গালি বা কটু কথা নয়, উত্তর দাও সৌজন্যে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদা ইয়াসমিন বলেন, “কেউ যদি গালমন্দ করে, আপনি যদি হাসিমুখে জবাব দেন বা ভদ্রভাবে কথা বলেন, তাতে তার ভেতরেও লজ্জা ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এটি মনস্তত্ত্বের একটি প্রভাবশালী দিক।”
শত্রুতা চিরস্থায়ী হয় তখনই, যখন উভয় পক্ষই প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করে। কিন্তু একপক্ষ যদি ধৈর্য ও ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তাহলে সম্পর্কের গতিপথ পাল্টাতে বাধ্য।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মঈনুল ইসলাম জানান, “একসময় আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে তীব্র বিরোধ ছিল। কিন্তু একদিন আমি তার অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করায় আমাদের সম্পর্ক পাল্টে যায়। এখন আমরা একে অন্যের পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিই।”
শত্রুতা নিবারণের একটি শ্রেষ্ঠ উপায় হলো শালীনতা। মূর্খতার জবাবে চিৎকার না করে, একটি চিন্তাশীল ও নরম মন্তব্য শত্রুকে ভাবতে বাধ্য করে। গবেষণা বলছে, মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের শুরু হয় তখনই, যখন সে নিজের আচরণে অপরের উদারতার প্রতিফলন দেখে।
ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, হিন্দুধর্মসহ সব বড় ধর্মেই বলা হয়েছে, শত্রুর সঙ্গে সহনশীল ও সদাচরণ করাই শ্রেয়। ইসলাম ধর্মে কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে,
“তুমি মন্দের জবাবে যা উত্তম, তা গ্রহণ করো। তখন দেখবে—তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে যেন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে।” (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৩৪)
শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, এই নীতিগুলো সংসার, সমাজ এমনকি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও প্রয়োগযোগ্য। পারস্পরিক সহনশীলতা ও সদ্ব্যবহার একটি জাতিকে সংঘাত থেকে শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে।
মানবাধিকার কর্মী শবনম নাসরিন বলেন, “আমরা যদি পারিবারিক শিক্ষায় শিশুদের শিখাতে পারি—শত্রুতা নয়, সহনশীলতাই শ্রেষ্ঠ গুণ, তবে একদিন সমাজে সহিংসতার হার কমবে। নেতিবাচক শক্তিকে ইতিবাচক আচরণ দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
শত্রুতা জীবন থেকে মুছে ফেলা না গেলেও, আচরণের দ্বারা তার প্রকৃতি পাল্টানো যায়। মন্দকে ভালো দিয়ে প্রতিহত করা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি এক শক্তিশালী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। সময় এসেছে সমাজে শত্রু নয়, বন্ধু গড়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলার।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.