নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে নারী-পুরুষ উভয়ের ওপরই কোরবানি ফরজ
ধর্ম বিষয়ক প্রতিবেদক
ঢাকা, মঙ্গলবার
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান কোরবানি। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তাকওয়ার প্রকাশ। প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে কোরবানির বিষয়ে অনেক সময় ভুল ধারণা এবং অজ্ঞতা থেকে সমাজে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।
অভিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত বহু পরিবারে আজও কোরবানি কেবল গৃহকর্তার দায়িত্ব বলেই মনে করা হয়। অথচ ইসলামী শরিয়তে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে—
“প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যেন তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ পশুর ওপর তাঁর নাম স্মরণ করে কোরবানি দেয়।”
(সূরা আল-হাজ্জ: ৩৪)
অন্যদিকে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—
“যার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
(সুনান ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)
আলেমরা বলেন, এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, কোরবানি সামর্থ্যবানদের ওপর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা অবহেলা করা বড় গুনাহ।
নারীদের ক্ষেত্রে করণীয়
মুফতি ওলামা কেরামের মতে, যদি কোনো নারীর কাছে ঈদের দিন নির্ধারিত হারে (প্রায় ৫২.৫ তোলা রূপা বা সমমূল্যের অর্থ) সম্পদ থাকে এবং তা তার মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে হয়, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। স্বামী বা পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া কোরবানি নারী সদস্যের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নয়, যদি না তা স্পষ্টভাবে তাদের পক্ষ থেকেও নির্ধারিত হয়।
সমাজে প্রচলিত বিভ্রান্তি
অনেক পরিবারে দেখা যায়, কেবল গৃহকর্তা বা পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই কোরবানি দেন। নারীরা যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তবুও তাদের জন্য আলাদা করে কোরবানির ব্যবস্থা করা হয় না। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এটি একটি বড় ভুল, যা সংশোধন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলেম মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “নারীরা যদি স্বর্ণালঙ্কার বা সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাহলে তাদের জন্যও কোরবানি ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্তা চাইলে তাদের পক্ষ থেকেও কোরবানি দিতে পারেন, তবে তা স্পষ্ট নিয়তের মাধ্যমে হওয়া আবশ্যক।”
উপসংহার
কোরবানি একটি ইবাদত এবং এতে তাকওয়ার পরিচয় দেওয়া হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ সমভাবে ইবাদতের দায়িত্ব বহন করে। তাই কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ক্ষেত্রে ইসলামি বিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা জরুরি।
আলেমরা আহ্বান জানিয়েছেন, এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির বিধান যথাযথভাবে পালনের জন্য প্রত্যেকে যেন নিজের ওপর ওয়াজিব কিনা তা যাচাই করেন এবং সেই অনুযায়ী ইবাদত সম্পাদন করেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.