সরকারি ঘোষণা ১৩ দিনেও বাস্তবে কার্যকর নয়, বিপাকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, মঙ্গলবার
সরকার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তার কোনো সুফল পাচ্ছে না দেশের প্রধান শিল্প খাতগুলো। ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ (১৩ দিন) পেরিয়ে গেলেও তৈরি পোশাক, বস্ত্র এবং অন্যান্য শিল্প-কারখানায় গ্যাসের তীব্র সংকট অব্যাহত রয়েছে। কোথাও সরবরাহ একেবারে বন্ধ, আবার কোথাও চাপ এতটাই কম যে, অনেক ইউনিটে কার্যত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
শিল্প উদ্যোক্তাদের দাবি, গ্যাস সংকটের কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এতে একদিকে যেমন বিদেশি ক্রেতার আস্থা হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের ওপরও পড়ছে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব।
উৎপাদন অর্ধেকে, বন্ধ বিনিয়োগ
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় অনেক কারখানায় পুরো শিফটই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আবার অনেক কারখানায় বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন চালু রাখতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এ অবস্থায় অনেক উদ্যোক্তাই নতুন অর্ডার নিতে সাহস পাচ্ছেন না।
ঢাকার আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ হান্নান বলেন, "আমরা আশা করেছিলাম সরকার ঘোষিত বাড়তি গ্যাস সরবরাহ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি।"
সরকারের দাবি ও বাস্তব চিত্রে পার্থক্য
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ চলতি মাসের শুরুতে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে গ্যাস ঘাটতি দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে বাস্তবে শিল্পখাতে সেই গ্যাস পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা বাড়তি সরবরাহ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি, তবে সেটি এখনো নিরবচ্ছিন্ন নয়। ফলে শিল্প এলাকাগুলোতে চাপ ঠিকঠাক রাখা সম্ভব হচ্ছে না।”
আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা
পোশাক শিল্প দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ জোগান দেয়। এ খাতে উৎপাদন কমে গেলে এর প্রভাব পড়ে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সংকট বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাহত করছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রপ্তানিমুখী শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বারবার ঘাটতি হলে বৈদেশিক ক্রেতাদের আস্থা কমে যাবে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য অশনিসংকেত।”
উপসংহার
গ্যাস সংকট এখন আর কেবল জ্বালানি সমস্যা নয়, এটি অর্থনৈতিক সংকটের রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ঘোষণার বাইরে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রপ্তানিমুখী শিল্পে বিরূপ প্রভাব আরও প্রকট হবে।
এখন দেখার বিষয়, সরকার ঘোষিত বাড়তি গ্যাস সরবরাহ শিল্পখাতে কবে নাগাদ বাস্তবে পৌঁছায় এবং সংকট থেকে কবে মুক্তি পায় দেশের প্রধান রপ্তানিখাত।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.