চাকরি হারিয়ে নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ, বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, বুধবার
বেকারত্ব—বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় এক অনুচ্চারিত সংকট। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চাকরি হারিয়ে হাজারো মানুষ নতুন করে যুক্ত হয়েছেন বেকার তালিকায়। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বহু শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, যাঁরা প্রথমবারের মতো কর্মজীবনে প্রবেশের অপেক্ষায়। দেখা-অদেখা, ঘোষিত-অঘোষিত—সব ধরনের বেকার মিলে দেশের শ্রমবাজারে চাপ বাড়ছে দিন দিন।
বেকারত্বের প্রকৃত চিত্র নির্ধারণ যেমন জটিল, তেমনি জটিল এ শব্দের সংজ্ঞাও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর সংজ্ঞা অনুসারে, কেউ যদি গত সাত দিনে এক ঘণ্টাও কোনো ধরনের কাজ না করে থাকেন, কিন্তু গত সাত দিন এবং আগত দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন এবং গত এক মাসে (৩০ দিনে) বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজে থাকেন—তাহলেই তিনি ‘বেকার’ হিসেবে গণ্য হন।
এই কঠোর সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৮ লাখ। তবে বাস্তবতা আরও জটিল ও গভীর। কারণ, এই পরিসংখ্যানের বাইরেও রয়েছে বিপুল সংখ্যক ‘আংশিক বেকার’, যাঁরা খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী কাজ করলেও তা জীবিকা নির্বাহের জন্য যথেষ্ট নয়। আবার অনেকেই মাসের বেশিরভাগ সময় কর্মহীন থাকেন, যাঁরা এই পরিসংখ্যানে ধরা পড়েন না।
শিক্ষিত তরুণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বেরিয়ে আসা তরুণদের বড় অংশই কাঙ্ক্ষিত কিংবা উপযুক্ত চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন না। অনেকেই দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও কোনো কাজ না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব বলেন, “শুধু ডিগ্রি নয়, বাস্তবমুখী দক্ষতা না থাকায় তরুণরা চাকরি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। আবার প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির সংখ্যা সীমিত হওয়ায় বিকল্প সুযোগও সংকুচিত হয়ে গেছে।”
চাকরি হারানোর নতুন ঢেউ
সম্প্রতি নানা আর্থিক সংকট, উৎপাদন খাতের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপে অনেক প্রতিষ্ঠান ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। তৈরি পোশাক, আইটি, মিডিয়া, এনজিও, এমনকি ব্যাংক ও আর্থিক খাতেও কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে নতুন করে বেকার হচ্ছেন অভিজ্ঞ কর্মজীবীরাও।
গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানা থেকে ছাঁটাই হওয়া এক শ্রমিক বলেন, “বছরের পর বছর কাজ করলাম, হঠাৎ করেই জানিয়ে দিল, কাজ নেই। এখন নতুন কিছু পাচ্ছি না। সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে গেছে।”
সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল উন্নয়ন প্রকল্পের বড় বাজেট দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরির সহায়তা এবং ন্যূনতম কর্মসংস্থান নিশ্চিতে কার্যকর কর্মসূচি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই বেকারত্বের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
বিশিষ্ট শ্রম অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদা আক্তার বলেন, “আমরা যদি সময়মতো এই বেকার তরুণদের উৎপাদনশীল খাতে না আনতে পারি, তাহলে আগামী দিনে তা সামাজিক সংকটে পরিণত হতে পারে।”
উপসংহার
পরিসংখ্যান যতই শীতল হোক, বাস্তবতা অনেক বেশি প্রগাঢ়। প্রত্যেক ‘সংখ্যা’র পেছনে লুকিয়ে আছে একটি জীবনের অনিশ্চয়তা, একটি পরিবারের সংগ্রাম। বেকারত্ব এখন কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নও বটে। তাই সময় এসেছে সমস্যাকে স্বীকার করে কার্যকর সমাধান খোঁজার।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.