রিপোর্টার:
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: প্যারিস, রোববার, ২৫ মে ২০২৫
গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে অবশেষে মুখ খুলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। বিশ্বের অনেক দেশের নীরবতা ও পাশ্চাত্যের দ্বিচারিতার মধ্যে ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি ফিলিস্তিন ও গাজাবাসীর প্রতি তাঁর ‘পূর্ণ সমর্থন’ প্রকাশ করেছেন। এক আবেগঘন ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন, “আমরা গাজাবাসীকে বাঁচাতে সর্বতোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।”
এই বক্তব্যে ফরাসি প্রেসিডেন্টের অবস্থান পশ্চিমা নেতৃত্বের মাঝে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছে বলে মত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
গণসমর্থনের ঢেউ ফ্রান্সজুড়ে
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে গাজার পক্ষে জনসমর্থনের ঢেউ দেখা যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ইসরায়েলের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। দেশটির নাগরিকরা ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সহায়তা পাঠানোর আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ প্রজন্ম এবং বামপন্থী রাজনীতিবিদদের মধ্যে গাজা সংকট নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফ্রান্সের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘গাজা গণহত্যা’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি আরও আলোচিত হয়ে উঠেছে।
ম্যাখোঁর বক্তব্যে নতুন বার্তা
এক সংবাদ সম্মেলনে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন,
“আমরা আর নিরব থাকতে পারি না। গাজায় যা হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গাজাবাসীর পাশে আছি। যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনের জন্য আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের সমস্ত কূটনৈতিক ও মানবিক শক্তি প্রয়োগ করব যেন এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান আসে। ফ্রান্স আর কেবল দর্শক থাকবে না।”
পশ্চিমাদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের হামলায় শিশু, নারী ও নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুর পরও পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের নিরবতা ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা বিশ্বজনমতের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় ম্যাখোঁর বক্তব্য একদিকে যেমন মানবতা ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পক্ষে সাহসী উচ্চারণ, অন্যদিকে পশ্চিমাদের চিরাচরিত দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে এক ধরনের ‘নৈতিক চাপ’।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, “ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এই সংকটে মানবিক ও নৈতিক অবস্থান পুনর্নির্ধারণে সাহায্য করবে।”
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করে, “এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।” তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল সব সময় যেকোনো সমালোচনাকে ‘বৈরিতা’ হিসেবে দেখিয়ে গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে।
ফ্রান্সের পদক্ষেপসমূহ
ফরাসি সরকার ইতোমধ্যে গাজার জন্য ২০ কোটি ইউরো মানবিক তহবিল বরাদ্দ করেছে। পাশাপাশি রেডক্রস ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থী ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ মানবিক ভিসা চালুর পরিকল্পনাও চলছে।
উপসংহার:
মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে পশ্চিমা বিশ্বের বহু নেতা যখন চুপচাপ, তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর জোরালো অবস্থান এক নতুন বার্তা বহন করে। তাঁর এই মানবিক ও নৈতিক অবস্থান শুধু ফরাসিদের নয়, বিশ্বজনমতের প্রতিফলন হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। অনেকেই আশা করছেন, এ অবস্থান আরও দেশকে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে উৎসাহিত করবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.