ধর্ম ডেস্ক:
মানুষের জীবনে সন্তান সবচেয়ে বড় আবেগের উৎস। তাদের হাসি, কাঁদা কিংবা ছোট ছোট সাফল্যকে ঘিরে অভিভাবকেরা আবেগে আপ্লুত হন। তাই সন্তানের মধুর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায় প্রায় প্রতিটি পরিবার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ইসলামের দৃষ্টিতে এই চর্চা কতটা বৈধ?
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার ও বিভিন্ন ফিকহি মতবাদের বিশ্লেষণে জানা গেছে, অহেতুক বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে মানুষের ছবি তোলা এবং তা প্রকাশ করা শরিয়তসম্মত নয়। বিশেষত যখন এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা আরও বড় সমস্যার জন্ম দেয়।
ইসলামে ছবি তোলা সম্পর্কে সতর্কতা:
হাদিস শরিফে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—
“যারা ছবি তোলে, কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৫৪)
আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“প্রত্যেক চিত্রকার (ফটো তুলনাকারী) জাহান্নামে যাবে। তার বানানো প্রতিটি ছবির জন্য আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন, যতক্ষণ না সে তার মধ্যে প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১১০)
যদিও সমসাময়িক ফকিহগণ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে (যেমন—পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, অপরিহার্য চিকিৎসা বা নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজনে) ছবি তোলার অনুমতি দিয়েছেন, তবে বিনোদন, গর্ব প্রদর্শন বা অহেতুক শেয়ারিং ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
শিশুদের বদনজর ও মানসিক ক্ষতির ঝুঁকি:
আলেমগণ আরও সতর্ক করেছেন যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুদের ছবি প্রকাশ করার ফলে তারা ‘আয়ন’ (বদনজর)-এর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ইসলামে বদনজরকে একটি বাস্তবতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“আমি আশ্রয় চাই হিংসুকের হিংসা থেকে যখন সে হিংসা করে।”
(সূরা ফালাক, আয়াত: ৫)
শিশুর প্রতি অতিরিক্ত প্রশংসা, সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শন—এইসবই অনেক সময় হিংসা ও নজর লাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার প্রভাব পড়ে শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা অনেক সময় নিজের অজান্তে ‘পারফরমেন্স অ্যাংজাইটি’ বা ‘আত্মপ্রদর্শনের চাপ’ অনুভব করে, যখন তাদের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরায় ধারণ করে অন্যদের সামনে তুলে ধরা হয়।
শরিয়ত ও আধুনিক বাস্তবতা—একটি ভারসাম্য দরকার:
ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। সন্তানদের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা যায়—কিন্তু তা যেন অপ্রয়োজনীয় শেয়ারিং, আত্মগর্ব বা প্রদর্শনের মাধ্যম না হয়।
উপসংহার:
সন্তান আল্লাহর নিয়ামত। এই নিয়ামতের হেফাজত করা যেমন ফরজ, তেমনি ইসলামের সীমারেখা লঙ্ঘন না করাও অপরিহার্য। অভিভাবকদের উচিত—প্রযুক্তির ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ইসলামের নির্দেশনার আলোকে চলা, যেন সন্তানরাও দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ থাকে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস এম নজরুল ইসলাম অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা) মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০ মোবাইলঃ ০১৭১৪-৩৪০৪১৭ ইমেইলঃkazialamin577@gmail@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক আশুলিয়া. All rights reserved.