দৈনিক আশুলিয়া
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুতা বহন থেকে অজুর পানি আনা—ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের অনন্য রূপ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
আজকের ডিজিটাল যুগে যখন ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক অনেকটা পেশাগত ও দূরত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তখনও দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর আঙিনায় গড়ে উঠছে এক অনন্য সংস্কৃতি—শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আত্মিক বন্ধনের এক অনুপম চিত্র।
একজন সাবেক কওমি ছাত্র তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেন, “যত দিন কওমি মাদরাসায় পড়েছি, তত দিন কমবেশি শিক্ষকের জুতা বহন করা এবং তাঁদের অজুর পানি এনে দেওয়া খুব কমন বিষয় ছিল। শিক্ষক জুতা হাতে হেঁটে যাচ্ছেন, আর আমরা তাঁর কাছাকাছি থেকেও জুতা নিজের হাতে তুলে নিইনি—এমন হতো না।”
এই সংস্কৃতি শুধু বাহ্যিক আনুগত্য নয়; বরং এর পেছনে লুকিয়ে থাকে আদব, শিষ্টাচার ও তাওয়াজ্জুরের এক গভীর শিক্ষা। কওমি মাদরাসায় শিক্ষককে শুধুই পাঠদানের ব্যক্তি নয়, বরং একজন পথপ্রদর্শক, একজন অভিভাবক, এমনকি কখনো কখনো রূহানী পিতার মর্যাদায় দেখা হয়।
মাদরাসা সংশ্লিষ্ট এক প্রবীণ শিক্ষক দৈনিক আশুলিয়াকে জানান, “এই শিক্ষা ছাত্রদের আত্মতুষ্টির নয়, বরং চরিত্র গঠনেরই অংশ। বড় হওয়ার জন্য আগে নিজেকে ছোট হতে হয়—এই চর্চা ও ত্যাগ থেকেই নেতৃত্ব তৈরি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রের উপস্থিতিতে শিক্ষক নিজের জুতা বহন করবেন আর ছাত্র খালি হাতে হেঁটে যাবে—এটা ছাত্রের জন্য বেমানান, অপমানজনক মনে করা হয়। এসব কাজের মধ্য দিয়েই ছাত্রদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, বিনয় ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়।”
অনেকেই বলছেন, এই চর্চা যেন যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিলুপ্ত না হয়ে যায়। কারণ এটি কেবল ধর্মীয় শিক্ষার অংশ নয়, বরং নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ শেখানোর অন্যতম মাধ্যম।
শিক্ষা সমাজের আয়না। আর কওমি মাদরাসায় গড়ে ওঠা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এই সম্পর্ক নতুন প্রজন্মকে শেখায়, শ্রদ্ধা বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। শুধু জ্ঞান নয়, আদবের শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলেই আমরা গড়তে পারি আদর্শ মানুষ, আদর্শ সমাজ।
প্রতিবেদন
মোঃ আল আমিন কাজী
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক আশুলিয়া
report@dainikashulia.com