স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আশুলিয়া
নির্বাচনের আগে সারা দেশে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে অপরাধজগৎ। তৎপর হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা। সীমান্ত পেরিয়ে আসা অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদে বেড়ে গেছে রক্তের খেলা। পুলিশের লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলির এক বছরেরও বেশি সময়েও হদিস মেলেনি।
র্যাবের তথ্যমতে, গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশের ৪৬০ থানা ও ১১৪ ফাঁড়ি থেকে পিস্তল, রাইফেল, এসএমজি, শটগানসহ ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র ও ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি গুলি লুট হয়। এর মধ্যে গণভবন থেকে লুট হয় এসএসএফের ৩২টি ভারী অস্ত্র, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, শেল, স্প্রে ও সাউন্ড গ্রেনেড। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৪৮৪টি অস্ত্র এবং ২০ হাজারের বেশি গুলি। ফলে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এখনো অপরাধীদের হাতে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, লুট হওয়া এসব অস্ত্র ব্যবহার করেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, খুন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
রাজধানীতে টার্গেট কিলিং
১ আগস্ট মহাখালীতে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবক জামাল হোসেনকে। পরদিন দারুস সালামে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলি করে হত্যা করা হয় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী তাহমিনা রহমানকে। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, এই দুই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ বলেন, “অপরাধীকে আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখি। অবৈধ অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।”
চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও কুমিল্লায় রক্তঝরা সংঘর্ষ
গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে মহড়া দেয় চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা। নরসিংদীর পলাশে সংঘর্ষে ছাত্রদল কর্মী ইসমাইল হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সাবেক ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
রাজধানীতেও টাকার জন্য প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ১৮ জুন মিরপুরে গুলি করে ২১ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ৬ আগস্ট মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে গুলিতে মারা যান শাহেন শাহ, আহত হন শুভ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর জুড়ে সেখানে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণ চলে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অটোরিকশাচালক সাদ্দাম হোসেন সনু ও কসাই সাগরসহ অনেকে।
অবৈধ লাইসেন্সধারীদের অস্ত্রও বিপদে
স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে দেওয়া হয়েছে ৫১ হাজার ৭৫৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেওয়া হয় ১০ হাজার ৮৪৫টি। লাইসেন্স স্থগিতের পর জমা পড়ে ৯ হাজার ১৯১টি অস্ত্র, বাকি ১ হাজার ৬৫৪টি অস্ত্র এখন অবৈধভাবে অপরাধীদের হাতে রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “দল ও ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে অপরাধ দমন করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কোনো কিছুই গোপন থাকে না।”
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোরালো অভিযান না চালালে নির্বাচনের আগে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।
