ঢাকাThursday , 5 June 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম ও জীবন
  8. বিনোদন
  9. বিশেষ প্রতিবেদন
  10. রাজনীতি
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত আরাফার প্রান্তর

Link Copied!

বৃহস্পতিবার, ৯ জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি | ৫ জুন ২০২৫ | প্রকাশকাল: সকাল ৮টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মক্কা থেকে:
আজ বৃহস্পতিবার, ৯ জিলহজ, সৌদি আরবের হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পবিত্র হজ পালনের দিন। এ দিনই ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন হিসেবে পরিচিত। মক্কার উপকণ্ঠে অবস্থিত আরাফাতের বিস্তৃত প্রান্তরে সমবেত হয়েছেন প্রায় ১৪ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান, যারা বিশ্বব্যাপী নানা প্রান্ত থেকে এসে আল্লাহর ডাকের জবাব দিয়েছেন হৃদয়ভরা আবেগে — ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’

আরাফাতের প্রান্তর আজ এক অপার্থিব আবহ ধারণ করেছে। সাদা রঙের ইহরামে আবৃত হাজিদের রোদনভরা আহ্বান, চোখের জলে গলিত মুখ, কণ্ঠে করুণ আকুতি—সব মিলিয়ে যেন জগৎ ছুঁয়ে যাওয়া এক অব্যক্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

আরাফার দিন ও জাবালে রহমত
আরাফার ময়দানের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত ঐতিহাসিক জাবালে রহমত পাহাড়টি হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। পবিত্র হজের খুতবা এ পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই প্রদান করা হয়। এ স্থানেই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে দাঁড়িয়ে মানবতার সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বার্তা দিয়েছিলেন। আজ সেদিনের স্মরণে হাজিরা দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে প্রভুর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা
সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবারের হজকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। প্রায় ১ লাখ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে। রয়েছে হাজার হাজার চিকিৎসাকর্মী ও ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে হাজিদের মাঝে ছাতা, পানি, ঠান্ডা পানীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

একই কাতারে ধনী-গরিব, শ্বেত-শ্যাম, রাজা-প্রজা
হজের মাহাত্ম্য এখানেই যে, এখানে সবাই সমান। কোনো শ্রেণিভেদ নেই, নেই জাতিগত বিভাজন। রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব, শ্বেতাঙ্গ-শ্যামাঙ্গ—সবাই এক সারিতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে নিজেদের নিঃস্ব ও অসহায় প্রমাণ করছেন। তাদের কণ্ঠে একটিই ধ্বনি —
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক।”
(অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নেয়ামত শুধু তোমারই। সমস্ত রাজত্বও তোমার।)

ক্ষমা ও অনুগ্রহের আশায় সমবেত হাজিরা
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত এই মুসলিম জনস্রোত আরাফাতের প্রান্তরে সমবেত হয়েছেন একটিমাত্র অভিপ্রায়ে—প্রভুর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভ। ইসলামী বিশ্বাস মতে, আরাফার দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের ওপর রহমতের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, এবং যারা এই দিনটিতে খাঁটি মন নিয়ে দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল হয়।

আজকের কর্মসূচি ও পরবর্তী কার্যক্রম
আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিরা আরাফাতের প্রান্তরে অবস্থান করবেন। এরপর তারা রওনা হবেন মুজদালিফার উদ্দেশে, যেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। আগামীকাল ঈদুল আজহার দিন তারা মিনায় ফিরে গিয়ে কুরবানি করবেন এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন, যা হজের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


বিশেষ মন্তব্য:
হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। আর হজের মূলতম দিন হলো আজকের আরাফা। এ দিনটি শুধু হাজিদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যও এক বিশেষ দিন। যারা হাজিরা হতে পারেননি, তারাও আজ রোজা রেখে দোয়া-ইস্তেগফার করে থাকেন।