নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | শনিবার, ৭ জুন ২০২৫
যথাযোগ্য মর্যাদা ও গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল আজহার জামাত। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিতে শুরু করেন।
বৃষ্টিতে বিড়ম্বনায় নগরবাসী
ঈদের দিনের সকালটা শান্তভাবে শুরু হলেও হঠাৎ করেই নামে বৃষ্টি। সকাল ৯টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই বৃষ্টি শুরু হয়। এতে অনেক এলাকাতেই কোরবানির প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে। যারা ঘরের বাইরে বা খোলা জায়গায় কোরবানির আয়োজন করেছিলেন, তাদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। কোথাও কোথাও কোরবানির সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে, আবার কোথাও অস্থায়ীভাবে ত্রিপল বা প্লাস্টিক শিট ব্যবহার করে কোরবানি সম্পন্ন করতে হয়।
মিরপুর ১১-এর বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, “বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গরু ঢেকে রাখতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এরপর রাস্তার পাশে পানি জমে যাওয়ায় কোরবানির কাজ কিছুটা দেরি করে করতে হয়েছে।”
অলিগলি-ছাদ-গ্যারেজ—যেখানে সুযোগ, সেখানেই কোরবানি
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসার গ্যারেজ, অলিগলি, খোলা জায়গা, এমনকি ভবনের ছাদেও কোরবানির কাজ চলছে। পাড়া-মহল্লাভিত্তিক কোরবানি অনেক জায়গায় উৎসবমুখর পরিবেশে হলেও বৃষ্টির কারণে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং রক্ত-মাংস নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণে বিশেষ দল মাঠে রয়েছে।
কোরবানির মাংসের দাম ও বাজারজাত নিয়ে প্রশ্ন
অন্যদিকে, কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে পরিবহন, হাটে নির্ধারিত হাসিল, কসাইয়ের মজুরি, আনুষঙ্গিক খরচ—সব মিলিয়ে এবার কোরবানির গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজিতে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৫০ থেকে ১১০০ টাকা। অথচ সেই মাংসই ঈদের দিন বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, “আমাদের কোরবানির গরুর ওজন ও খরচ হিসেব করলে প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। অথচ একই ধরনের মাংস আজই অনেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এটা অনেকেই অতিরিক্ত কোরবানি দিয়ে ব্যবসার সুযোগ নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন
সাধারণ মুসল্লিদের একাংশ বলছেন, পবিত্র কোরবানির চেতনার সঙ্গে মাংসের বাণিজ্যিক ব্যবহার এক ধরনের অনৈতিকতা। যদিও কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, অতিরিক্ত পশু কোরবানি দিয়ে দুঃস্থদের জন্য কিছু বিক্রি করাই তাদের উদ্দেশ্য।
পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের পর্যবেক্ষণ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণে তারা প্রস্তুত রয়েছে। বিকেল ৫টার মধ্যে শহরকে পরিষ্কার রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঈদ শুধু উৎসব নয়, আত্মত্যাগ ও সমবেদনার শিক্ষা
ধর্মীয় নেতারা বলছেন, ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা হচ্ছে আত্মত্যাগ, সংযম এবং সাম্যের চর্চা। কোরবানির মাধ্যমে সেই শিক্ষা যেন ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজে প্রতিফলিত হয়, এটাই ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য।