দৈনিক আশুলিয়া
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন | রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
কড়াইবাড়ীমুরাদনগরে পৈশাচিক গণহত্যা: মব লিচিংয়ে এক পরিবারের তিনজনকে হত্যা, আতঙ্কে
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আকুবপুর ইউনিয়নের কড়াইবাড়ী গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে গেল এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। মব সৃষ্টির মাধ্যমে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুরো গ্রামজুড়ে এখন আতঙ্কের ছায়া। অনেক পরিবার প্রাণভয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
নিহতরা হলেন:
মো. হানিফ (৫৫) – কৃষক
রোকেয়া বেগম (৫০) – তার স্ত্রী
সজীব হোসেন (২৫) – একমাত্র সন্তান
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল হানিফ পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় এক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মুখোশধারী একদল লোক হানিফের বাড়িতে ঢুকে তাদের বেধড়ক মারধর করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পাশের ঘরের আত্মীয়স্বজন চিৎকার করলেও কেউ কাছে আসেনি।
গ্রামজুড়ে নিরাপত্তাহীনতা
হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় লোকজন গভীর উদ্বেগে রাত পার করছেন। গ্রামের স্কুল, দোকান ও বাজার প্রায় বন্ধ। শিশু-কিশোররাও ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
প্রশাসনের বক্তব্য
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন দৈনিক আশুলিয়াকে জানান:
“প্রাথমিক তদন্তে এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
তিনটি মরদেহ বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রাজনৈতিক রেষারেষির ইঙ্গিত
একাধিক স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হানিফ পরিবার রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল। পূর্ব বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিন্দা
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে:
“এটি একটি পৈশাচিক গণপিটুনি। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে।”
📌 আরও পড়ুন:
গণপিটুনি কি আইনহীনতারই নামান্তর?
মুরাদনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনার পেছনের কারণ
✍️ প্রতিবেদন: আল আমিন | প্রকাশিত: রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫ | ছবি: স্থানীয় পাঠানো