দৈনিক আশুলিয়া
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ | ঢাকা
প্রথম পৃষ্ঠা | বিশেষ প্রতিবেদন
৫২ বছরে ১,৯৫৬ জন নিহত, চলমান পুশ ইন কৌশলে বাড়ছে উত্তেজনা
নিজস্ব প্রতিবেদক | দৈনিক আশুলিয়া
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। ১৯৭২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৯৫৬ জন বাংলাদেশি। চলতি বছরেও থামেনি এই নির্বিচার হত্যা। সর্বশেষ গত শুক্রবার ও শনিবার বিএসএফের গুলিতে ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে নিহত হয়েছেন দুজন। এর আগেও এক কিশোরীসহ একাধিক নিরীহ মানুষ নিহত হন ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে।
মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর আর কোথাও এমন সীমান্ত হত্যার নজির নেই। মুখে প্রতিশ্রুতি দিলেও ভারত এই হত্যাকাণ্ড থামানোর কোনো বাস্তব উদ্যোগ নেয়নি। বরং সীমান্তে সাধারণ মানুষ ঠেলে দেওয়া বা ‘পুশ ইন’ প্রক্রিয়া নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
একের পর এক গুলিতে ঝরছে প্রাণ
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের জুড়ি সীমান্তে ১৪ বছরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা দাস বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। নিজের মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মামার বাড়ি যেতে গিয়ে কাঁটাতারের কাছে গুলিতে ঝরে যায় তার জীবন। স্বর্ণার মা সঞ্জিতা রানী দাসসহ আরও কয়েকজন আহত হন।
এই ঘটনার মাত্র সাত দিন পর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ১৫ বছরের কিশোর জয়ন্ত সিংহ বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে প্রাণ হারান আল আমিন (৩২)।
সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “এটা মেনে নেওয়া যায় না, আমরা আরও কঠোর হব।” তবে সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি।
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দেওয়ার পরামর্শ
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, “ভারতের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ন্যায়বিচার আদায়ের চেষ্টা করা উচিত।”
তিনি বলেন, “ভারতের প্রবণতা হলো আতঙ্ক তৈরি করা। সীমান্তে গুলি করে তারা এক ধরনের ক্ষমতার প্রদর্শন করে বোঝাতে চায়, তারা বড় শক্তি।”
সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন কৌশল চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে
সীমান্ত হত্যা চললেও আরেকটি গুরুতর উদ্বেগজনক দিক হলো সীমান্ত দিয়ে মানুষ ঠেলে দেওয়া বা পুশ ইন। গত কয়েক মাসেই দুই হাজারের বেশি মানুষকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাভাষী মুসলিম এবং রোহিঙ্গা শরনার্থীরাও।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দিল্লি, রাজস্থান, গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাভাষী মুসলিমদের সন্দেহজনক অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে। এরপর রাতের আঁধারে বিএসএফের পাহারায় অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
গত ৩ জুলাই গুজরাটের ভাদোদরা থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে ২৫০ জন নারী-পুরুষকে এয়ারলিফট করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এনে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই মানুষগুলোকেও ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে বা করা হবে, এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
ভারত কি কূটনীতি মানছে?
সাউথ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবি নায়ার বলেন, “এটা অনেকটা কিডন্যাপিংয়ের মতো। ভারতের ভেতর থেকে মানুষ ধরে এনে সীমান্তে ছেড়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের শামিল।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ থাকলেও ভারত এখন আর তা মানছে না। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ছে।”
উপসংহার
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেভাবে প্রাণ ঝরছে, তা শুধু একটি দেশের নিরাপত্তা ইস্যু নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক উদাহরণ। সরকার ও কূটনীতিকদের এখনই আরও শক্ত অবস্থান নেওয়া জরুরি। একদিকে হত্যার শিকার মানুষ, অন্যদিকে জোর করে ঠেলে দেওয়া পরিবার—এভাবে আর কতকাল?
📌 বিশেষ প্রতিবেদন:
-
সীমান্ত হত্যা: পরিসংখ্যান ও প্রকৃত গল্প
-
‘পুশ ইন’ কৌশলের শিকার পরিবারগুলোর করুণ বাস্তবতা
-
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ও ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ
✍ প্রতিদিনের প্রতিবেদন, আশুলিয়ার কণ্ঠস্বর — দৈনিক আশুলিয়া
📞 ফোন: ০১৭xxxxxxx
🌐 ওয়েব: www.dainikashulia.com
📩 ইমেইল: news@dainikashulia.com