স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক আশুলিয়া
শরীয়তপুর সদরে স্থানীয় অ্যাম্বুল্যান্স সিন্ডিকেটের বাধার কারণে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। স্বজনদের অভিযোগ, শিশুটি জীবিত থাকতে বারবার অনুরোধ করেও প্রায় ৪০ মিনিট অ্যাম্বুল্যান্স আটকে রাখে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম সদরের নিউ মেট্রো ক্লিনিকে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও জন্মের পর থেকেই সে শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছিল। চিকিৎসকরা দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালের পাশের ঢাকার অ্যাম্বুল্যান্স চালক মোহাম্মদ মোশারফ মিয়াকে ৫ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়। সন্ধ্যায় তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলে স্থানীয় অ্যাম্বুল্যান্সচালক সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ান গাড়ির গতিরোধ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা দাবি করেন— সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো অ্যাম্বুল্যান্স এ রুটে যাতায়াত করতে পারবে না। এরপর মোশারফ মিয়ার কলার ধরে নামিয়ে চাবি কেড়ে নেওয়া হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
এসময় নবজাতকের মা ও স্বজনরা বারবার অনুরোধ করলেও গাড়ি ছাড়েনি অভিযুক্তরা। প্রায় ৪০ মিনিট পরে অ্যাম্বুল্যান্সের ভেতরেই শিশুটি মারা যায়। ঘটনাস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে অভিযুক্তরা এরই মধ্যে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নিহত শিশুর নানী শেফালী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সময়মতো ঢাকায় নিতে পারলে আমার নাতি বেঁচে যেত। ওরা আমার নাতির মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে দিয়েছে। আমি বিচার চাই।”
শিশুটির স্বজন রানু আক্তার জানান, “আমরা ঢাকার একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেছিলাম। সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ানসহ কয়েকজন আমাদের ৪০ মিনিট আটকে রাখে। ওদের কারণেই আমার শিশুটি মারা গেছে।”
অ্যাম্বুল্যান্স চালক মোশারফ মিয়া বলেন, “আমি ঢাকায় ফিরতি ট্রিপে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। আমি বলেছিলাম চাইলে নিজেরাই গাড়ি নিয়ে যান, কিন্তু রোগীর স্বজনরা আমাকে যেতে বলেছিল। ওরা ছাড়েনি, মারধর করেছে। আর তখনই শিশুটি মারা যায়।”
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, নবজাতকটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু চালক ফিরতি অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহারে বাধা দেয়ায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বিলম্ব হয়। অভিযোগ পেলে এবং তদন্তে অপরাধের প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ নিজ উদ্যোগেও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।