দৈনিক আশুলিয়া
📅 বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
দোকান থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গায় চলছে লুডু, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন গেমে টাকার লেনদেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, আশুলিয়া:
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশুলিয়া, সাভার ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া বা ‘ডিজিটাল গ্যাম্বলিং’। মোবাইল ফোনের অ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পরিচালিত এসব জুয়া খেলায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দোকানেই চলছে ভার্চুয়াল জুয়া!
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকার বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার, ইন্টারনেট ক্যাফে ও গেমিং দোকানের আড়ালে চলছে এই অবৈধ অনলাইন জুয়া ব্যবসা। “লুডু অনলাইন”, “ক্যাসিনো ২৪”, “স্পিন অ্যান্ড উইন”, “টিন পট্টি” কিংবা “রুলেট গেম” নামে নানা অ্যাপে খেলোয়াড়রা যোগ দিচ্ছেন। কেউ কেউ বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে অংশ নিচ্ছেন এই ভার্চুয়াল জুয়ায়।
একাধিক তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হয় এসব গেমে। এক ক্লিকে কেউ হারাচ্ছে দিনের উপার্জন, আবার কেউ জিতে পেয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
সহজ টাকায় আসক্ত তরুণ প্রজন্ম
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন,
“রাত জেগে তরুণরা ফোনে লুডু খেলছে। কিন্তু সেটা বিনোদনের জন্য নয়, টাকার লোভে। হারলে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ পর্যন্ত গড়ায়।”
এদিকে, এলাকায় অনেক শিক্ষার্থীও এই জুয়ার ফাঁদে পড়েছে। অনেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দোকানে বসে বা বাড়িতে গোপনে মোবাইল ফোনে এসব অ্যাপে যুক্ত হচ্ছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।
অর্থপাচারের নতুন মাধ্যম
আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন জুয়া এখন শুধু বিনোদন নয়—এটি হয়ে উঠেছে অর্থপাচারের আধুনিক কৌশল। বিদেশি সার্ভারভিত্তিক অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টাকা বাইরে পাচার হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্যও বিপজ্জনক।
প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান,
“আমরা অনলাইন জুয়া বন্ধে কাজ করছি। কিন্তু এই চক্রগুলো প্রায়ই সার্ভার পরিবর্তন করে ফেলে, যার ফলে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।”
তবে স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাস, এ ধরনের অবৈধ অনলাইন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।
জনমনে ক্ষোভ
এলাকার সচেতন মহল বলছেন,
“যেভাবে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই অনলাইন জুয়া, এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে সামাজিক ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।”
উপসংহার
প্রযুক্তির অপব্যবহার আজ সামাজিক অস্থিরতার নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন জুয়ার বিস্তার রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবক ও সমাজের প্রত্যেক সদস্যের সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।

