দৈনিক আশুলিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আগামী ডিসেম্বর মাসে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে, ঢাকার নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ মনে করছে, এই পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান মূলত নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের বৈধতা আদায়ের প্রচেষ্টা মাত্র।
দুই ধাপে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এটাই প্রথম সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে জান্তা সরকার।
নির্বাচন দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে — প্রথম পর্ব আগামী ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, আর দ্বিতীয় পর্ব ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি।
গত আগস্টে মিয়ানমার সরকার ঘোষণা দেয়, বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে। এর আগে গত ৩১ জুলাই দেশব্যাপী জারি করা জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়, যাতে নির্বাচনের প্রস্তুতি সহজ হয়।
বিরোধীদের বয়কট ও বিতর্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়া
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে নিবন্ধন করেছে, যার মধ্যে ৯টি দল সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
তবে **অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)**সহ অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করছে, এ নির্বাচন মিন অং হ্লাইংয়ের ক্ষমতা ধরে রাখার একটি প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।
বাংলাদেশের সতর্ক কূটনীতি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
অধিকন্তু, জান্তা সরকারের এই আহ্বানে ‘নীরব প্রতিক্রিয়া’ বজায় রাখার কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করছে ঢাকা।
এছাড়া মিয়ানমার শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশকেই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক সরকার নিজেদের রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করছে।
প্রেক্ষাপট ও অতীত নির্বাচন
মিয়ানমারে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে, যেখানে অং সান সু চির দল এনএলডি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়।
তবে ২০২১ সালে সেই নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ক্ষমতা দখল করেন এবং দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেন।
এরপর থেকেই দেশটিতে চলছে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও সশস্ত্র সংঘাত, যা আজও অব্যাহত।
📰 দৈনিক আশুলিয়া
“সত্যের পথে, জনগণের পাশে”

