ঢাকা | ইসলামিক ডেস্ক রিপোর্ট
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পবিত্রতা ও নৈতিকতার উপর জোর দেয়। এই পবিত্র ধর্মে ব্যভিচার—অর্থাৎ বিবাহবহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক—কে শুধু নৈতিকভাবে নয়, আইনগতভাবেও একটি মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী, এ অপরাধের পরিণতি দুনিয়াতেও কঠিন এবং আখিরাতেও ভয়াবহ।
কুরআনের ভাষ্যে ব্যভিচারের পরিণতি
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন:
“তোমরা ব্যভিচারের ধারে-কাছে যেয়ো না। নিঃসন্দেহে এটি অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।”
(সূরা আল-ইসরা: ৩২)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ শুধু ব্যভিচার নিষিদ্ধ করেননি, বরং এমন যেকোনো কাজ থেকেও দূরে থাকতে বলেছেন, যা ব্যভিচারে প্ররোচিত করতে পারে—যেমন অশ্লীলতা, অসঙ্গত মেলামেশা, নির্জনে অবস্থান ইত্যাদি।
হাদীসের আলোকে ব্যভিচার ও ইমানের সম্পর্ক
সাহাবি আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“ইমান হচ্ছে একটি সুন্দর পোশাক, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে তা পরিয়ে দেন। কিন্তু যখন কেউ ব্যভিচার করে, আল্লাহ তখন তার গা থেকে ইমানের পোশাক খুলে নেন। এরপর যদি সে তওবা করে তবে আল্লাহ তাকে আবার ওই পোশাক ফিরিয়ে দেন।”
(বায়হাকি, আবু দাউদ, তিরমিজি ও হাকেম)
এই হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে: ব্যভিচার একটি ব্যক্তির অন্তরের ইমানকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। এটি শুধু বাহ্যিক পাপ নয়, বরং অন্তরের গভীরতম পবিত্রতাকেও কলুষিত করে।
ইসলামে শাস্তির বিধান: কঠোরতা ন্যায়বিচারের অংশ
ইসলামে শাস্তির উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয়, বরং সমাজকে নিরাপদ রাখা, পবিত্রতা বজায় রাখা, এবং মানুষকে সতর্ক করা।
অবিবাহিত ব্যক্তির জন্য শাস্তি:
কুরআনে বলা হয়েছে:
“ব্যভিচারকারী নারী ও ব্যভিচারকারী পুরুষ—তাদের প্রত্যেককে একশ বার করে প্রহর করো।”
(সূরা আন-নূর: ২)
বিবাহিত ব্যক্তির জন্য শাস্তি:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে বিবাহিত ব্যভিচারীদের জন্য প্রয়োগ করা হত রজম (পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড)। তবে এই শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর প্রমাণের শর্ত রয়েছে—চারজন ন্যায়পরায়ণ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য অথবা অপরাধীর নিজ স্বীকারোক্তি।
তওবা: আশার আলো
তবে ইসলাম একমাত্র শাস্তির ধর্ম নয়; বরং এটি আশা ও করুণার ধর্ম। পাপ যত বড়ই হোক, তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহ বলেন:
“আর যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে—আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্যে পরিণত করে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা আল-ফুরকান: ৭০)
সমাজের করণীয়: শিক্ষা, সচেতনতা ও পরিবারিক বন্ধন
ইসলামী সমাজব্যবস্থায় ব্যভিচার প্রতিরোধে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:
-
পুরুষ ও নারীর পর্দার বিধান।
-
বিবাহকে সহজ করা এবং জেনারেল সচেতনতা বাড়ানো।
-
পরিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনের বাস্তবায়ন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে। কারণ এটি দৃষ্টি সংযত রাখে ও লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখে।”
(বুখারি ও মুসলিম)
উপসংহার: পবিত্র সমাজ গঠনে ব্যক্তির নৈতিকতা অপরিহার্য
ব্যভিচার শুধু একজন ব্যক্তির ইমানকেই দুর্বল করে না, বরং গোটা সমাজকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। তাই ইসলামী সমাজে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। তবে একইসাথে আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য ক্ষমার দরজাও খোলা রেখেছেন।
একটি সমাজ তখনই কল্যাণময় হয়, যখন নৈতিকতা, পবিত্রতা এবং তওবার শিক্ষা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।