ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানবজীবনের প্রতিটি দিক সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— সত্য বলা এবং মিথ্যা থেকে বিরত থাকা। মিথ্যা বলা শুধু একটি খারাপ অভ্যাসই নয়, বরং তা একটি মারাত্মক গুনাহ, যার পরিণতি দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ।
মিথ্যুকের ওপর আল্লাহর লানত
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মিথ্যাবাদীদের প্রতি তাঁর অভিশাপ বর্ষণের কথা বলেছেন।
আল্লাহ বলেন—
“অতঃপর আমরা সবাই (আল্লাহর কাছে) এ মর্মে প্রার্থনা করি যে, মিথ্যুকদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।”
(সুরা আলে ইমরান: ৬১)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মিথ্যা বলা কেবল একটি নৈতিক দোষ নয় বরং তা এমন এক গুনাহ, যার কারণে একজন ব্যক্তি আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত হতে পারে।
অভ্যাসে পরিণত মিথ্যা একদিন ধ্বংস ডেকে আনে
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন—
“…যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যার সন্ধানে থাকে, সে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।”
(সহিহ মুসলিম: ২৬০৭)
এই হাদিস আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, যদি কেউ নিয়মিত মিথ্যা বলা অভ্যাসে পরিণত করে, তবে একসময় সে চূড়ান্ত মিথ্যুক হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং আল্লাহর নিকট সে সেই পরিচয়েই লিপিবদ্ধ হয়।
মেরাজের রাতে মিথ্যাবাদীর শাস্তি
মেরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন গুনাহগারদের শাস্তির দৃশ্য দেখতে পান। তিনি দেখেন,
এক ব্যক্তি বসা, পাশে আরেকজন দাঁড়িয়ে। তার হাতে একটি লোহার পেরেক। সেই পেরেক দিয়ে সে লোক একজনের চোয়ালে আঘাত করে পেরেক ঢুকিয়ে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যায়। এরপর অপর চোয়ালেও একইভাবে আঘাত করে। যেই চোয়াল আগেই আঘাত করা হয়েছিল, তা আবার ঠিক হয়ে যায়, এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
জিজ্ঞাসা করা হলে বলা হয়—
“আপনি যার চোয়াল বিদীর্ণ হতে দেখেছেন, সে একজন মিথ্যাবাদী। সে মিথ্যা বলত এবং তা প্রচার হতে হতে দিগন্ত ছুঁয়ে ফেলত। কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।”
(সহিহ বুখারি: ১৩৮৬)
অযাচাইকৃত সংবাদ ছড়ানোও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত
বর্তমান সময়ে অনেকেই যাচাই না করে যেকোনো কথা বা সংবাদ প্রচার করে থাকে। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে বলেন—
“কারও মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই যাচাই না করে বলে বেড়ায়।”
(সহিহ মুসলিম: ৫)
এই হাদিসে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোনো তথ্য যাচাই না করে তা প্রচার করাও মিথ্যার পর্যায়ে পড়ে, এবং এটা ইসলাম অনুযায়ী বড় গুনাহ।
কোরআনের ঘোষণা
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
“(অনুমানভিত্তিক) মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক।”
(সুরা আয-যারিয়াত: ১০)
এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক করেছেন যে, অনুমাননির্ভর ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচারকারীরা ধ্বংসযোগ্য, কারণ তারা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং শান্তি বিনষ্ট করে।
উপসংহার
মিথ্যা বলা, বানোয়াট কথা ছড়ানো, যাচাই না করে গুজব রটানো—সবই ইসলাম অনুযায়ী কঠিন গুনাহ। এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে বাঁচানো যেমন ব্যক্তিগত ইমান রক্ষার অংশ, তেমনি তা সমাজের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যও জরুরি।
আসুন, আমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি এবং সমাজকেও এই মহাগুনাহ থেকে সতর্ক করি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্যনিষ্ঠ জীবনযাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।