দৈনিক আশুলিয়া
তারিখ: ১৩ জুন ২০২৫ | শুক্রবার
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টানা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল তেহরান, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে উত্তেজনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | দৈনিক আশুলিয়া
ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পরপর একাধিক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তা কয়েক কিলোমিটার দূরের এলাকা থেকেও অনুভূত হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা নূর নিউজ জানিয়েছে, এই বিস্ফোরণগুলো ইসরায়েলের চালানো সুনির্দিষ্ট হামলার ফল হতে পারে।
স্থানীয় সময় রাত আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়। তেহরানের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং আগুনের ঝলকানিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয় জনগণ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের উৎসস্থল হতে পারে কোনো সামরিক বা কৌশলগত স্থাপনা। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মিডিয়ার দাবি: ইসরায়েলি বিমান হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস একটি এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সরাসরি ইরানের ভেতরে হামলা চালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি তাদের দুইটি গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলের এ হামলা ছিল “প্রতিশোধমূলক ও পূর্ব পরিকল্পিত”।
উল্লেখ্য, গত মাসে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের শীর্ষ কমান্ডারদের মৃত্যু ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: উদ্বেগ ও সংযমের আহ্বান
বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনার নতুন সঞ্চার হয়। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এই মুহূর্তে সংযম সবচেয়ে জরুরি। যেকোনো ভুল পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।”
রাশিয়া ও চীন ইসরায়েলকে ‘উস্কানিমূলক আচরণ’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং ইরানকে ‘সতর্ক প্রতিক্রিয়া’ দেখানোর পরামর্শ দিয়েছে।
তেহরানে নিরাপত্তা জোরদার, হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি অভিযান শুরু করে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তেহরানের কয়েকটি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা ইউনিট সক্রিয় রাখা হয়েছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতামত: যুদ্ধের ছায়া নেমে আসছে
আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল বৈরিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. আমিন রেজা বলেন, “এই হামলা যদি সত্যিই ইসরায়েলের হয়ে থাকে, তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ইরানের জবাব দেখতে পারি। এতে পুরো অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।”
উপসংহার
তেহরানের বিস্ফোরণ বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার সূচনা করেছে। ইরান এবং ইসরায়েল যদি সরাসরি সংঘাতে জড়ায়, তবে তার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়— বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও মারাত্মক অভিঘাত ফেলতে পারে। এ মুহূর্তে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে তেহরান ও তেলআবিবের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
📰 আরও পড়ুন:
-
তেহরান বিস্ফোরণের স্থানে উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ
-
কুদস ফোর্স এবং ইসরায়েলের শত্রুতা: ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
-
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় কারা কী বলছে?
📍 দৈনিক আশুলিয়া | সাহসিকতায় আপসহীন