দৈনিক আশুলিয়া
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ | ঢাকা
প্রথম পৃষ্ঠা | ইসলাম ও জীবন বিভাগ
সাহাবিদের ব্যাখ্যায় ফুটে উঠেছে পবিত্র কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য
নিজস্ব প্রতিবেদক | দৈনিক আশুলিয়া
পবিত্র কোরআন শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি আরবি ভাষার এক অনন্য সাহিত্যকর্ম, যার প্রতিটি শব্দ, বাক্য এবং পরিভাষা গভীর তাৎপর্যে পরিপূর্ণ। এই মহাগ্রন্থের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনের জন্য এর ভাষারীতি ও শব্দচয়ন পদ্ধতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অপরিহার্য।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে শুরু করে যুগে যুগে কোরআন গবেষকরা কোরআনের ভাষারীতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁরা ভাষার বৈচিত্র্য, শব্দ ব্যবহারের পার্থক্য এবং বাক্য নির্মাণের ধরন বিশ্লেষণ করে এর গভীরতর অর্থ উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন।
শব্দের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার—গভীর তাৎপর্যের ইঙ্গিত
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “কোরআনে ব্যবহৃত ‘কাসুন’ শব্দ দ্বারা মদ বোঝানো হয়।” (সূত্র: ফাহমুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৫৩)। এ থেকেই বোঝা যায়, কোরআনের অনেক শব্দ বহুমাত্রিক অর্থবোধক এবং প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী এর অর্থ নির্ধারিত হয়।
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) কোরআনের শব্দ ব্যবহারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি নির্দেশ করেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ কোরআনে ‘মাতারুন’ শব্দটি শাস্তির অর্থে ব্যবহার করেছেন এবং ‘গাইসুন’ শব্দটি বৃষ্টি বা করুণা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।” (ফাতহুল বারি : ৮/১৬৪)
সম্বোধনের মাধ্যমে বুঝানো উদ্দেশ্যভিত্তিক শ্রোতা
ইবনে আব্বাস (রা.) আরও বলেন, “কোরআনের ‘ইয়া আইহুহান্নাস’ সম্বোধনটি সাধারণ মানুষের জন্য নয়, বরং তা মূলত মক্কার মুশরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে।” (দিরাসাতুন আনিল কোরআন, পৃষ্ঠা ১৬১)।
এই ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, কোরআনে ব্যবহৃত সম্বোধনগুলোও নির্দিষ্ট শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ করে, যা বুঝতে হলে ভাষাগত প্রেক্ষাপট গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হয়।
হুঁশিয়ারির পাশে আশা, ভীতির পাশে প্রেম—আল-কোরআনের বৈশিষ্ট্য
বিশিষ্ট তাফসিরকার আল্লামা জামাখশারি (রহ.) বলেন, “কোরআনের ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, যেখানে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, সেখানে সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।” (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৬২)।
এই ভারসাম্যপূর্ণ ভাষা কোরআনের বিশেষ অলঙ্কারিক বৈশিষ্ট্য, যা মানুষের মনে simultaneously ভয় ও আশা সৃষ্টি করে, পথ দেখায় এবং আত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
অতীত কালের মাধ্যমে ভবিষ্যতের সংবাদ—ভাষার বিস্ময়কর কৌশল
কোরআনের আরও একটি অনন্য ভাষারীতি হলো, ভবিষ্যতের ঘটনাবলী বলার সময়ও অতীত বাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়—নিশ্চয়তা ও বাস্তবতার প্রতীক হিসেবে। তাফসিরে কাশশাফ-এ বলা হয়েছে, “কোরআনের সাধারণ রীতি হলো কোনো বিষয় জানাতে অতীত কাল ব্যবহার করা হয়, ভবিষ্যৎ সময় বোঝালেও।” (তাফসিরে কাশশাফ : ৫/২১১)
এটি কোরআনের ভাষাকে আরও শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরআনের ভাষা বোঝা শুধু শব্দজ্ঞান নয়, বরং প্রেক্ষাপট, নিদর্শন ও রীতিনীতির গভীর অনুধাবন প্রয়োজন। যারা কোরআন বুঝে পড়তে চান, তাদের জন্য ভাষার এই সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো জানা জরুরি। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী তাফসিরবিদদের ব্যাখ্যা সেই পথেই আমাদের আলোকিত করে।
📌 আরও পড়ুন:
-
তাফসিরের ইতিহাস ও ভাষার প্রভাব
-
নবী করিম (সা.) এর যুগে কোরআন ব্যাখ্যার ধারা
-
আধুনিক ভাষাতত্ত্বে কোরআনের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য
✍ ধর্মের আলোয় প্রতিদিন — দৈনিক আশুলিয়া
📞 ফোন: ০১৭xxxxxxx
🌐 ওয়েব: www.dainikashulia.com
📩 ইমেইল: islam@dainikashulia.com