🖋 প্রতিবেদক | দৈনিক আশুলিয়া ডেস্ক
স্থান: সাভার-আশুলিয়া | প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
সাভার ও আশুলিয়ার জামগড়া, বাইপাইল, তেঁতুলতলা ও শিমুলতলা এলাকায় একের পর এক অভিযানের পরও থামছে না অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিস্তার। প্রশাসনের নজরদারি ও তিতাস গ্যাসের বিশেষ অভিযান চলমান থাকলেও সংঘবদ্ধ দালাল চক্র প্রতিনিয়ত কৌশলে নতুন সংযোগ স্থাপন করে চলেছে। এতে যেমন রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে গ্যাস বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির ঝুঁকি।
✅ তিন মাসে ২ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন
গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত অভিযানে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রায় ২ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার পাইপলাইন, হাজারো রাইজার ও চুলা।
শুধু গত সপ্তাহেই আশুলিয়া ও মেঘনাঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০ লাখ টাকার গ্যাস চুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
🔥 প্রশ্ন উঠে—অভিযানের পরও সংযোগ কীভাবে পুনঃস্থাপন হয়?
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য:
-
দালাল-লাইনম্যান চক্র:
স্থানীয় কিছু গ্যাস মিস্ত্রি ও অসাধু লাইনম্যান রাতে ঘুষের বিনিময়ে পুনরায় সংযোগ চালু করে। তাদের সঙ্গে তিতাসের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ। -
মাটির নিচে ফেলে রাখা পুরনো লাইন:
অভিযানের সময় সব লাইন অপসারণ সম্ভব না হওয়ায় পরবর্তীতে সেগুলোর মাধ্যমেই পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। -
‘আবাসিক’ পরিচয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার:
দোকান, হোটেল ও ফ্যাক্টরি মালিকরা বাসা হিসেবে পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস চালায়। -
শেয়ারিং সংযোগ:
কিছু ভবন মালিক বৈধ সংযোগ থেকে অন্য ভাড়াটিয়াদের গোপনে গ্যাস সরবরাহ করেন। বিনিময়ে আদায় করেন মাসিক টাকা। -
অভিযানের পর রাতেই সংযোগ পুনঃস্থাপন:
অনেক সময় দেখা গেছে, বিকেলে অভিযানে লাইন কাটা হলেও, রাতের মধ্যেই আবার সংযোগ সচল হয়ে গেছে।
💣 বাড়ছে ঝুঁকি, ঘটছে দুর্ঘটনা
নিম্নমানের পাইপ ও টিউব ব্যবহারের ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সামান্য বাতাসে চুলা নিভে গিয়ে গ্যাস জমে থাকে, আর এক সময় ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
২০২৩ সালে আশুলিয়ায় অবৈধ সংযোগ থেকে সৃষ্ট একটি বিস্ফোরণে ৪ জনের মৃত্যু হয়, দগ্ধ হন আরও অনেকে। তবুও শিক্ষা নেয়নি কেউ।
📊 মাসে গ্যাস চুরি প্রায় ৬০ লাখ টাকার
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, শুধু সাভার ও আশুলিয়া এলাকা থেকে মাসে ৫০-৬০ লাখ টাকার গ্যাস অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়।
এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকাজুড়ে ৩০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ।
⚖️ মামলা হলেও বিচার হয় না
কয়েকটি হোটেল, কারখানা ও দোকানকে জরিমানা করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দালালরা পালিয়ে যায় বা প্রমাণের অভাবে মামলা আদালতে টিকতে পারে না। ফলে অপরাধীরা দিনকে দিন হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া।
🔍 কর্তৃপক্ষের ভাষ্য
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক আশুলিয়াকে বলেন—
“আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অনাগ্রহ, দালালদের প্রভাব এবং দুর্বল আইনি কাঠামো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচেতনতা ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”
✅ সমাধানের পথ কী হতে পারে?
-
প্রতিটি এলাকায় স্মার্ট গ্যাস মিটার ও রিমোট সেন্সরিং চালু
-
স্থানীয় থানা ও প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত জোনভিত্তিক অভিযান
-
গোপন তথ্যদাতাদের জন্য হটলাইন চালু করে উৎসাহ দেওয়া
-
দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শাস্তি নিশ্চিত করা
-
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী ভূমিকা আরও সক্রিয় করা