ইসলাম বিষয়ক প্রতিবেদক:
সন্তান প্রতিপালন নিছক পারিবারিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ইবাদত। মা-বাবার ওপর সন্তানের প্রতিপালনের দ্বৈত দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে—একটি বাহ্যিক প্রতিপালন এবং অন্যটি মনস্তাত্ত্বিক গঠন। ইসলামী শিক্ষায় এই বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে।
বাহ্যিক প্রতিপালন:
সন্তানের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা মা-বাবার মৌলিক দায়িত্ব। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“তারা যেন তাদের সন্তানদের ক্ষুধার ভয় বা দারিদ্র্যের আশঙ্কায় হত্যা না করে। আমিই তাদের রিজিক দিই, তোমাদেরও।”
(সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৩১)
এই আয়াতটি বোঝায় যে, সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে তাদের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা মা-বাবার দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তোমার সন্তানদের প্রতি তোমার দায়িত্ব হলো, তাদের জন্য হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করা এবং তাদের সদুপদেশ দেওয়া।”
(তিরমিযি, হাদিস ১৯২৩)
মনস্তাত্ত্বিক গঠন ও চরিত্র শিক্ষা:
শুধু শারীরিক খাওয়া-দাওয়াই নয়, ইসলামে সন্তানের মানসিক, নৈতিক ও আত্মিক গঠনকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন:
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।”
(বুখারি ও মুসলিম)
এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজ শিক্ষা দাও।”
(আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৫)
এই হাদিস বোঝায় যে, সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই শুরু করতে হবে। তাদের অন্তরে আল্লাহভীতি, আমানতদারি, সততা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব।
উলামা ও বিশেষজ্ঞদের মত:
মাওলানা ইউসুফ কাশেমী, ইসলামিক চিন্তাবিদ বলেন, “আজকের শিশুই আগামী দিনের নাগরিক। তাকে যদি সঠিকভাবে গড়ে তোলা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সমাজ তার মূল্য চুকাতে বাধ্য হবে। কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে প্রতিপালন না হলে সন্তান হয়তো সফল পেশাজীবী হতে পারে, কিন্তু একজন খোদাভীরু মানুষ নয়।”
সমাজ বিজ্ঞানী ড. ফারহানা হক বলেন, “শুধু আধুনিক শিক্ষা নয়, সন্তানের মনের গভীরে আত্মসংযম, সহমর্মিতা ও আখিরাতের জবাবদিহিতার বোধ গড়ে তোলা জরুরি। এ কাজ শুরু হয় পরিবার থেকে, এবং মা-বাবাই এর প্রথম শিক্ষক।”
সম্পাদকের কথা:
আজকের দ্রুতগামী প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে আমরা সন্তানের বাহ্যিক চাহিদা পূরণে যতটা মনোযোগী, তাদের নৈতিক ও মানসিক গঠনে ততটাই উদাসীন। কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ চেতনায় ফিরে আসা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।