ঢাকাSunday , 25 May 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম ও জীবন
  8. বিনোদন
  9. বিশেষ প্রতিবেদন
  10. রাজনীতি
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এক লাখ কোটি টাকার কাগজশিল্প ধুঁকছে: বন্ধ ৭০টি কারখানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

Link Copied!

রিপোর্টার:
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ঢাকা, রোববার, ২৫ মে ২০২৫


দেশের কাগজশিল্প চরম সংকটে পড়েছে। প্রায় এক লাখ কোটি টাকা মূল্যের এ শিল্পে নেমে এসেছে অচলাবস্থার ছায়া। চলমান সংকট, গ্যাস স্বল্পতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তার অভাবে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১০৬টি কারখানার মধ্যে ৭০টি। বাকি ৩৬টি কারখানাও চলছে অর্ধেক উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে।

কাগজশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ শিল্পে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রতিবন্ধকতা চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানিতে জটিলতা, গ্যাস–বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিয়মিততা এবং রপ্তানি সুবিধায় অনাগ্রহ—সব মিলিয়ে শিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

বাংলাদেশ কাগজ ও ছাপাখানা মালিক সমিতির (বিপিপিএমএ) সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “শিল্পটি বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণসহ নীতিগত সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা আমলে নেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার সুপারিশ করলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।”

তিনি জানান, “গ্যাসের চরম সংকটে প্রতিটি কারখানা দিনে গড়ে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা অচল থাকে। এমন অবস্থায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। অথচ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না, কারণ বাজারে সস্তা আমদানিকৃত কাগজে সয়লাব।”

অন্যদিকে একাধিক কারখানা মালিক জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত সুদের হার এবং কড়াকড়ি নিয়মের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই দেউলিয়া হওয়ার পথে।

সরকারি উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সময় দেশের কাগজ শিল্প রপ্তানিমুখী খাতে পরিণত হয়েছিল। প্রায় ৫০ হাজার লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান ছিল এই খাতে। এখন তার অর্ধেকই কর্মহীন। বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এখন বহু নারী শ্রমিক কাজ হারিয়ে পরিবারসহ চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ কনজিউমেবল পেপার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমেদ বলেন, “আমাদের বহু কারখানা এখনো টিকে আছে শুধুমাত্র ধারদেনার ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণ অসম্ভব। কিন্তু তারা যেন এ খাতের প্রতি উদাসীন।”

বিশেষজ্ঞদের মত

অর্থনীতিবিদ ড. ফারহানা তাসনিম বলেন, “দেশীয় শিল্প রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু আমদানিনির্ভর নীতিতে দেশ চললে স্থানীয় শিল্পগুলোর পতন অনিবার্য। কাগজ শিল্প শুধু একটি খাত নয়, এটি শিক্ষা, প্রকাশনা, সংবাদপত্র, ও বাণিজ্যের প্রাণভোমরা। এর পতন হলে বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাতকে সহায়তা দেওয়া হয়। তবে কাগজশিল্প নিয়ে এখনো কোনো আলাদা প্যাকেজ বা উদ্যোগ নির্ধারণ হয়নি। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে।”


উপসংহার:
এক সময়ের সম্ভাবনাময় কাগজশিল্প আজ ধুঁকছে অবহেলার কারণে। সরকারি নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা ছাড়া এ খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এক লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ, হাজার হাজার কর্মসংস্থান ও দেশের কাগজ স্বনির্ভরতা সবই হারিয়ে যাবে বিদেশি নির্ভরতায়।