ঢাকাMonday , 26 May 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম ও জীবন
  8. বিনোদন
  9. বিশেষ প্রতিবেদন
  10. রাজনীতি
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শিরোনাম: জলবায়ু সংকটের মাঝেও পশ্চিমে বাড়ছে পরিবেশবিদ্বেষী রাজনীতি

Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা | সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি, ঠিক তখনই পশ্চিমা বিশ্বের একাংশে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্থান ঘটছে এক নতুন ও বিপরীতমুখী ধারার—‘অ্যান্টি-এনভায়রনমেন্টালিজম’ বা পরিবেশবিদ্বেষ। এই প্রবণতা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু নীতিমালার ভবিষ্যতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

জলবায়ু সংকট: বাস্তবতা অনস্বীকার্য

বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার আচরণ, ভয়াবহ বন্যা, দীর্ঘস্থায়ী খরা, এবং অনেক প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি—সবকিছুই প্রমাণ করছে যে পৃথিবী এক গভীর সংকটে পড়েছে।

বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ এ পরিবর্তনের সরাসরি শিকার। নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং জলবাহিত রোগের বিস্তার সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে।

উল্টো স্রোতের রাজনীতি

তবে এসব বৈজ্ঞানিক সতর্কতা ও পরিবেশ আন্দোলনের বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু অংশে ক্রমশ জোরাল হচ্ছে অ্যান্টি-এনভায়রনমেন্টালিজম। এই রাজনীতির মূল বক্তব্য হলো—জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য অতিরঞ্জিত, এবং এর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা মূলত আসে কর্পোরেট স্বার্থ, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতির চাপ, এবং রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনের মোহ থেকে। কিছু রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারক জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পরিবেশবান্ধব নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সচেষ্ট হচ্ছেন।

ভ্রান্ত তথ্য ও মিডিয়ার ভূমিকা

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও পরিবেশবিরোধী বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কতাকে “মিথ” বা “ষড়যন্ত্র” হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং পরিবেশ আন্দোলনের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে অনেকেই।

বিজ্ঞান ও সচেতনতার আহ্বান

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের রাজনীতি কেবল জলবায়ু আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। তারা মনে করেন, এখনই সময়—জলবায়ু বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলোকে রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে তুলে আনার।

পরিবেশবিদ ড. শাহিনুর রহমান বলেন, “জলবায়ু সংকট বৈশ্বিক বাস্তবতা। এটি কোনো দলের বা দেশের সমস্যা নয়, বরং মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন। এ মুহূর্তে প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক গবেষণাভিত্তিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।”

বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু ইস্যুকে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিবেচনায় এনেছেন এবং ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রস্পেরিটি প্ল্যান’-এর মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে, তবে বৈশ্বিক সহায়তা ছাড়া এই লড়াইয়ে সফল হওয়া কঠিন হবে।


বিশ্ব এখন একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রলয়ংকারী বিপদ, অন্যদিকে রাজনৈতিক স্বার্থে পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলনকে বিতর্কিত করে তোলার চেষ্টা। এ সময়ে প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক সচেতনতা, তথ্যভিত্তিক গণআলোচনা এবং আন্তর্জতিক ঐক্য। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে হলে এখনই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।