আওয়ামী লীগ শাসনামলে দখল ও দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া সম্পদ এখন তদন্তের আওতায়
বিশেষ প্রতিবেদক:
দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় ক্ষমতা, পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, আমলা, স্থানীয় নেতা ও পাতিনেতারা দেশের নানা অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমি দখল ও কেনাকাটার মাধ্যমে নিজেদের অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। কারও কারও পরিচয় ছিল ‘এলাকার বড় ভাই’, কেউ আবার ‘ছায়া প্রশাসক’। তবে ক্ষমতা হারানোর পর এসব ‘প্রভাবশালী’ নেতার অনেকেই এখন পলাতক, আত্মগোপনে অথবা বিদেশে অবস্থান করছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। অনেকেই দেশেই আত্মগোপনে থাকলেও পরিচিত এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন। কেউ আবার পরিচিতি গোপন করে ভিন্ন পরিচয়ে বসবাস করছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য।
জমি দখল ও কাগজে-কলমে হস্তান্তর
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রভাবশালী নেতারা অসহায়, দরিদ্র ও প্রবাসী মানুষের জমি টার্গেট করে নামমাত্র দামে অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে লিখে নিয়েছেন। অনেক সময় জাল দলিল, ভুয়া খতিয়ান ও নকল খাজনার রসিদ দেখিয়ে সম্পত্তি নিজেদের করে নেন। এসব দখলের ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে—বাণিজ্যিক প্লট, কৃষিজমি, খাসজমি এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসার জায়গাও বাদ যায়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরদারি
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গোয়েন্দা সংস্থা ও ভূমি মন্ত্রণালয় একযোগে এসব জমি দখলের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, “অনেক সময় রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রশাসন এসব ঘটনা চেপে রাখলেও এখন সরকারের বদলের পর সত্য বের হয়ে আসছে। জমি দখলের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।”
জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
বহু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্তরা এখন জমির মালিকানা ফিরে পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এক ভুক্তভোগী জানান, “আমার বাবার ৪ বিঘা জমি এক সাবেক যুবনেতা ভয় দেখিয়ে লিখে নেয়। এখন শুনছি তিনি কানাডায় পালিয়ে গেছেন। আমরা কিছুই করতে পারি নাই।”
আইন বিশ্লেষকদের মতামত
প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশেদুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক প্রভাবকে ব্যবহার করে যারা দুর্বল মানুষের জমি দখল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। শুধু তদন্ত নয়, দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের জমি ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।”
বিশেষ তথ্য:
-
জমি দখলের অভিযোগে অভিযুক্তদের তালিকায় আছেন ১১ সাবেক এমপি, ৪ জন সাবেক মন্ত্রী, ২০ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা।
-
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও খুলনায়।
-
৫০টিরও বেশি জমি দখল মামলা দুদক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে তদন্তাধীন।
আরও পড়ুন
-
ভোটের আগে টাকার উৎস তদন্তে মাঠে নির্বাচন কমিশন
-
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ
-
নতুন সরকারের ‘জমি পুনরুদ্ধার অভিযান’ শুরু জুন থেকে