নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি ও রেলওয়ের কিছু কর্মচারীর দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে সরেজমিনে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২৮ মে) দুপুরে এই অভিযান পরিচালিত হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন দুদকের সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাওন মিয়া।
অভিযানের সময় দুদক টিম স্টেশনের টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বর ঘুরে দেখেন এবং যাত্রীদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করেন। অভিযানে আনসার বাহিনীর একটি মোবাইল টিমও উপস্থিত ছিল, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে অভিযোগ আসছিল—রংপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ পরে সেগুলো উচ্চ মূল্যে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি কিছু রেলওয়ে কর্মচারী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদক উপ-পরিচালক মো. শাওন মিয়া বলেন, “আমরা যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করি।现场 থেকে কিছু প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। টিকিট বিক্রির রেজিস্টার ও অনলাইন বুকিং ব্যবস্থাও যাচাই করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মচারীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকে অভিযোগ বা গুজবের ভিত্তিতে অভিযুক্ত করছি না। তবে প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্টেশন এলাকাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে নিয়মিত নজরদারি চলবে।”
স্থানীয় যাত্রীরা দুদকের এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টিকিট পাওয়া ছিল অত্যন্ত দুরূহ। স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছিল।
এদিকে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও টিকিট কাউন্টার ইনচার্জদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দুদকের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।
একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “স্টেশনের নিরাপত্তা ও টিকিট ব্যবস্থাপনায় কিছু ঘাটতি আছে, তবে আমরা তা দূর করার চেষ্টা করছি। যেসব অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয়:
-
অভিযানে কোনো চিহ্নিত কালোবাজারিকে হাতেনাতে ধরা না গেলেও, কয়েকজন সন্দেহভাজনের তালিকা তৈরি করেছে দুদক।
-
টিকিট রেজিস্টার ও সফটওয়্যার ডেটা মিলিয়ে অনিয়মের কিছু আলামত মিলেছে বলে সূত্রে জানা যায়।
-
অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্টেশনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
পরিশেষে:
রেলপথ এখনো সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। এই খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে দুদকের এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, এই ধরনের নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে রেল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।