ঢাকাThursday , 29 May 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম ও জীবন
  8. বিনোদন
  9. বিশেষ প্রতিবেদন
  10. রাজনীতি
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ব্যাংক খাত নজিরবিহীন সংকটে: ফিরছে না আমানতের টাকা, বাড়ছে একীভূতকরণের চাপ

Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। একের পর এক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গভীর সংকটে পড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না, ফলে আমানতকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মূলধন ঘাটতি, ঋণখেলাপির লাগামছাড়া প্রবণতা এবং তহবিল সংকটে পুরো খাতটি বর্তমানে চরম অস্থিরতায় ভুগছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১২টি ব্যাংক ও ৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।


আমানতকারীদের আস্থা তলানিতে

বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা রেখে এখন অনেক আমানতকারী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কোনো কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা একসাথে তুলতে দিচ্ছে না, আবার কোথাও টাকা তোলার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন আমানতকারী বলেন, “আমি নিজের চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা তুলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, আপাতত ১ লাখ টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব না। এটা খুবই উদ্বেগজনক।”


সমাধানে একীভূতকরণের উদ্যোগ, কিন্তু প্রশ্ন অনেক

সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকেই দুটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে এবং আরও কয়েকটির তালিকা তৈরি রয়েছে।

তবে খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোরপূর্বক একীভূতকরণ কোনো টেকসই সমাধান নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. নাসির উদ্দিন বলেন, “একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত বাজারভিত্তিক ও স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে। যে ব্যাংক নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না, তাকে আরেকটি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে সমস্যা দ্বিগুণ হতে পারে।”


খেলাপি ঋণের লাগাম টানতেই হবে

বর্তমানে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায়, যা জাতীয় বাজেটের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে প্রথমেই বড় খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রওশন আরা বলেন, “ব্যাংক খাতের এই ধস শুধু অর্থনীতিকে নয়, দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে পরিস্থিতি ১৯৯৭ সালের এশিয়ান ব্যাংকিং সংকটের মতো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”


বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আব্দুল হাকিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে আরও একীভূতকরণের পথে যাওয়া হবে, তবে প্রতিটি সিদ্ধান্তই মূল্যায়ন করে নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমানো, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অডিট ব্যবস্থায় জোর দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা হচ্ছে।


উপসংহার

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসবে না এবং এতে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একীভূতকরণ নয়, বরং প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কার্যকর সংস্কার।