ঢাকাThursday , 29 May 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম ও জীবন
  8. বিনোদন
  9. বিশেষ প্রতিবেদন
  10. রাজনীতি
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হজ ও ওমরাহ: কিছু প্রচলিত ভুল যা ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে

Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি
মক্কা শরিফ থেকে

হজ ও ওমরাহ—ইসলামের দুই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ। আর ওমরাহ সুন্নত হলেও তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বড় মাধ্যম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ ও ওমরাহ পূর্ণ করো।”
(সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৯৬)

তবে দুঃখজনকভাবে, অনেক হাজি ও ওমরাহ পালনকারী ব্যক্তি ইলমের ঘাটতি, সংস্কারমূলক ধারণা বা মনোযোগের অভাবে এমন কিছু ভুল করেন, যা ইবাদতের পবিত্রতা ও পূর্ণতা নষ্ট করে দিতে পারে। এ প্রবন্ধে কুরআন-হাদিসের আলোকে তেমন কিছু প্রচলিত ভুল ও তাদের সংশোধনের উপায় তুলে ধরা হলো।


১. নিয়তের ভুল ব্যাখ্যা ও ইখলাসের অভাব

অনেক হাজি হজ বা ওমরাহর সময় নিয়ত করেন শুধু সামাজিক মর্যাদা বা “হাজি সাহেব” খেতাবের জন্য। অথচ হাদিসে এসেছে:

“সব আমলই নিয়তের উপর নির্ভর করে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস ১)

আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ইবাদত করলে তা কবুল হয় না।


২. ইহরাম অবস্থায় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন

অনেকে ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার, দাড়ি কাটানো, চুল ছেঁড়া বা কাপড় ঠিক করার সময় চুল পড়লে গুরুত্ব না দেওয়ার মতো ভুল করে থাকেন। অথচ এসব বিষয়ের প্রতি ইসলাম কঠোরভাবে সতর্ক করেছে।

আল্লাহ বলেন:
“তোমরা মাথা মুন্ডন করো না, যতক্ষণ না কুরবানি পশু নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে।”
(সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৯৬)


৩. তাওয়াফে ভিড়ের মধ্যে জোরজবরদস্তি করা

তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ চুমু দিতে গিয়ে অনেকেই অন্য হাজিদের ধাক্কা দেন, কষ্ট দেন বা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন,

“তোমার ভাইকে কষ্ট দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করো না।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা)

তাওয়াফ শান্তভাবে, ধৈর্য ও নম্রতার সঙ্গে পালন করাই উত্তম।


৪. ভুল দোয়া ও ভিত্তিহীন আমল

অনেক হাজি তাওয়াফ, সাঈ বা আরাফাতে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট কিছু “কবুল দোয়া” খুঁজতে থাকেন বা দল বেঁধে উচ্চস্বরে দোয়া পড়েন, যা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রাসুল (সা.) বলেন,
“তোমরা আমার কাছ থেকে হজের নিয়ম শিখে নাও, কারণ আমি হয়তো তোমাদের সঙ্গে হজ আদায় করার শেষ বছর পার করছি।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস ১২৯৭)


৫. নারীদের হজের শালীনতা বজায় না রাখা

নারীদের মধ্যে অনেকে হজের সময় খুব রঙিন পোশাক, সুগন্ধি ও অতিরিক্ত সাজে বের হন, যা পর্দার নিয়মের পরিপন্থী। অথচ হজে নারীদের আরও বেশি পরহেযগার, নম্র ও শালীন হওয়া উচিত।

আল্লাহ বলেন,
“তোমরা তোমার সৌন্দর্য প্রকাশ করো না যেমন করে জাহিলিয়াতের যুগে করেছিলে।”
(সুরা আল আহজাব, আয়াত ৩৩)


৬. জাহিলি সংস্কার ও লোকাচার পালন

কোনো কোনো হাজি কাবার গেট ধরে কান্না করা, কাবার দেয়ালে কাপড় ঘষে নেওয়া, জামেরা (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) করার সময় গালাগালি করা ইত্যাদি কাজ করেন, যা রাসুল (সা.) বা সাহাবিদের আমলে ছিল না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যে আমাদের আমলের মধ্যে এমন কিছু তৈরি করল, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)


উপসংহার

হজ ও ওমরাহ আল্লাহর সাথে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলার ইবাদত। এখানে বাহ্যিক আয়োজনের পাশাপাশি আন্তরিকতা, ইলম ও সুন্নাহর অনুসরণ অপরিহার্য। ভুল ধারণা বা প্রচলিত ভুলের কারণে এ মহান ইবাদতের মর্যাদা যেন হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে প্রত্যেক হাজির সচেতন থাকা জরুরি।