নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জ, ৩ জুন ২০২৫
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীসংলগ্ন এলাকায় গরু পরিবহন নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুষ্কৃতিকারীদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে। দুই দিন আগে শীতলক্ষ্যা নদীতে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়—নদী থেকে গরু নামিয়ে তা অন্য হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই র্যাব-১১ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।
ভাইরাল ভিডিও ঘিরে আলোচনা
ভিডিওটিতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি নদীপথে আসা গরুগুলো জোরপূর্বক একটি ছোট হাটে নামিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বারবার বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে গরুগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ ও খামারিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
র্যাব-১১ এর অবস্থান
র্যাব-১১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “আমরা ভিডিওটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে—কিছু দুষ্কৃতকারী নদীপথে কিংবা সড়কপথে আনা গরু জোরপূর্বক নিজেদের ছোট হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব হাট ঈদের সময় অস্থায়ীভাবে বসে এবং সেখানে সাধারণত গরুর সংকট থাকে। তাই এই অপচেষ্টা।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়ীরা আসলে নির্ধারিত গন্তব্যেই গরু নিয়ে যেতে চান, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি জোর করে তাদের গন্তব্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। এটা দুঃখজনক এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।”
অভিযান ও সতর্কতা
র্যাব-১১ ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। স্থল ও জলপথে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং সকল হাট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যারা জোরপূর্বক গরু হাটে ঢোকানোর চেষ্টা করবে বা হাট ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান র্যাব-১১ অধিনায়ক।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
শীতলক্ষ্যা নদীপথ ব্যবহারকারী কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, “আমরা নির্ধারিত বড় হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথে কিছু লোক গরুগুলো আটকে দিয়ে বলছে ওদের হাটে নিতে হবে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে, কারণ বড় হাটে ভালো দাম পাওয়া যায়।”
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিটি হাটে নিয়োগকৃত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট থানাকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেষ কথা
কোরবানির পশুর হাট ঘিরে এই ধরনের দুষ্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ড পশু ব্যবসা, আইনশৃঙ্খলা এবং জনবিশ্বাস—তিনটি ক্ষেত্রেই বিরূপ প্রভাব ফেলে। র্যাব ও প্রশাসনের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপে আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।