বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫ | ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | আন্তর্জাতিক সংবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক | সূত্র: এএফপি
পাকিস্তানে বসবাসরত অবৈধ আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ফের কঠোর অভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকার। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই নতুন নির্বাসন অভিযানের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দুই লক্ষাধিক আফগান নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
এপ্রিলেই দেশ ছাড়ে এক লাখ ৩৫ হাজার
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই এক লাখ ৩৫ হাজারের বেশি আফগান পাকিস্তান ছেড়েছেন। মে মাসে এই সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৬৭ হাজারে। তবে জুনের প্রথম দু’দিনেই ফেরত পাঠানো হয়েছে আরও তিন হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে।
আট লাখ আফগান বহিষ্কারের টার্গেট
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার প্রায় আট লক্ষাধিক আফগান নাগরিককে বহিষ্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাদের অনেকেই দেশটিতে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। এদের মধ্যে অনেকে পাকিস্তানেই জন্মগ্রহণ করেছেন বা কয়েক দশক ধরে দেশটিতে বাস করছেন।
মানবিক সংকটের শঙ্কা
মানবাধিকার সংস্থাগুলো পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, অনেক আফগান পরিবার পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং নতুন প্রজন্মের অনেকেই আফগানিস্তান কখনো দেখেননি। তাই এদের হঠাৎ করে ফেরত পাঠানো মানে তাদের একটি অজানা অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া।
পাকিস্তানের অবস্থান
পাকিস্তান সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই কিংবা যারা নিবন্ধিত শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত নন, তাদের আর পাকিস্তানে থাকার অনুমতি নেই।
আফগানিস্তানের প্রতিক্রিয়া
কাবুলে তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, হঠাৎ নির্বাসনের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা অস্থায়ী শিবিরে ফেরত পাঠানো আফগানদের ঠাঁই দেওয়া হলেও সেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সেবা-সুবিধার অভাব রয়েছে।
বিশেষ বিশ্লেষণ:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নির্বাসন প্রক্রিয়া শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। একইসঙ্গে এটি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করেছে।