নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরকে ঘিরে দেশে-বিদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তাঁর এই সফরে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক কিংবা সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে কি না—এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ঢাকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্ভাব্য সাক্ষাৎ যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে তা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করবে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
‘সফরটি একান্তই কূটনৈতিক ও ব্যক্তিগত’
অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র সূত্রে জানা গেছে, ড. ইউনূসের এই সফর মূলত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে আয়োজিত একাধিক আলোচনাসভা ও সেমিনারে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। তবে লন্ডনে অবস্থানকালে তাঁর ব্যক্তিগত সময়সূচিতে এখনো কোনো রাজনৈতিক বৈঠকের বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
অন্যদিকে, বিএনপি-ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী। তবে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকনির্দেশনার ওপর।
গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এবং অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করতে ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সংলাপের মাধ্যমে একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করার প্রয়াস নিচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হলে সেটি একটি কৌশলগত মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল হক বলেন, “এই বৈঠক যদি হয়, তবে এটি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। বরং এর মাধ্যমে একটি বার্তা বহন করবে—যা আগামী দিনের রাজনীতিতে দৃশ্যত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।”
আন্তর্জাতিক মহলের নজর
ড. ইউনূস ও তারেক রহমান—দুইজনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত। তাঁদের সম্ভাব্য বৈঠককে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিক মহলেও আগ্রহ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কিছু দেশ নির্বাচনকালীন সরকার ও রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া নেই
এই সম্ভাব্য সাক্ষাৎ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি পর্যায় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে কেউ কেউ বলছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই ধরনের সাক্ষাৎ গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে ফেলে দেবে।”
শেষ কথা এখনো অনিশ্চিত
সব মিলিয়ে, ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক আদৌ হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ধোঁয়াশা থাকলেই কৌতূহল বেশি’—এখনকার পরিস্থিতি অনেকটাই সে রকম। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কী মোড় নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।