দৈনিক আশুলিয়া
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ওয়ান ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুই মামলায় ৩৬০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে একই জমির দলিল ব্যবহার করে দুটি ভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আলোচিত ব্যবসায়ী আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে। দেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে অন্যতম বড় এই জালিয়াতির ঘটনায় আর্থিক খাতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সম্রাট মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্স ও সাঈদ ফুডস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল ওয়ান ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের নামে ৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। এ ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নম্বর ৬৫৩৮ অনুযায়ী ২৮ শতক জমি বন্ধক দেখানো হয়।
পরে ওই বছরের ১৬ জুন তিনি ঋণ বাড়িয়ে ৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকায় উন্নীত করেন, যা নতুন করে সাঈদ ফুডস লিমিটেডের নামে নেওয়া হলেও পূর্বের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সকেও দায়বদ্ধ করা হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতে আবু সাঈদ চৌধুরী একই জমির ভুয়া দলিল (নম্বর ৭০৬৪) তৈরি করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল সেটি সোনালী ব্যাংকের লালদীঘি করপোরেট শাখায় বন্ধক রেখে আরও ৫১ কোটি টাকা ঋণ নেন মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের নামে।
দুটি ব্যাংকের কোনো একটির অনুমতি ছাড়াই একই সম্পত্তি একাধিকবার বন্ধক রাখার বিষয়টি স্পষ্টতই আইনবহির্ভূত ও প্রতারণার শামিল। এসব ঋণের বিপরীতে সম্রাট কোনো অর্থ পরিশোধ না করায় বর্তমানে ওয়ান ব্যাংকের বকেয়া সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
ব্যাংকিং সেক্টরে ধাক্কা
অভিযোগ উঠেছে, এই জালিয়াতির পেছনে চক্রবদ্ধ একটি দালাল সিন্ডিকেট, কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু কর্মচারী জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি তদন্ত করছে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (BFIU), দুদক ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID)।
ওয়ান ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক উভয়ই সম্রাট ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে খেলাপি মামলাসহ প্রতারণার মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীর পলাতক থাকার অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাট ব্যবসার কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও প্রতিষ্ঠান কার্যালয় বন্ধ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক আশুলিয়াকে বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের সমস্যা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নথি যাচাই ও দলিল সত্যতা নিশ্চিত করতে না পারার দায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
প্রতিবেদন
তানভীর আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক আশুলিয়া
chittagong@dainikashulia.com