ধর্ম ডেস্ক
জুমার দিন ইসলামের দৃষ্টিতে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, একে সপ্তাহের ঈদের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই দিনে রয়েছে বিশেষ বরকত, রহমত ও গুনাহ মাফের অপার সুযোগ। কুরআন ও সহিহ হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত নিয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট আলোচনা। জুমা নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি সম্মিলিত ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যম।
📖 কুরআনের আলোকে জুমার গুরুত্ব
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।”
(সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, জুমার দিনে নামাজের ডাক শোনার পর দুনিয়াবি সব কাজ বাদ দিয়ে মসজিদের দিকে ধাবিত হওয়া মুসলমানদের জন্য ফরজ।
📜 হাদিসে জুমার মাহাত্ম্য
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“সপ্তাহের দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমা। এই দিনেই আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আর এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮৬২)
অন্য এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন—
“জুমার দিন মুসলিমদের জন্য এক ঈদের দিন।”
(সুনান ইবন মাজাহ)
🌿 জুমার দিনের সুন্নত ও করণীয়
ইসলামী শরিয়তে জুমার দিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলের সুপারিশ করা হয়েছে:
-
গোসল করা (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৭৭)
-
পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা
-
আতর ব্যবহার করা
-
দ্রুত মসজিদে যাওয়া
-
খুতবা মনোযোগসহকারে শোনা
-
সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা (সহিহ মুসলিম)
রাসুল (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, পরিপাটি হয়ে মসজিদে যায়, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে এবং নামাজ আদায় করে—তার আগের জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
🤲 বিশেষ মুহূর্ত
জুমার দিন এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়। নবীজি (সা.) বলেন—
“জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে—যদি তা হারাম না হয়—আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
🌍 সামষ্টিক দৃষ্টিতে জুমা
জুমার দিন শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতের নয়, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। প্রতি সপ্তাহে লাখো মুসলমান একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করে, খুতবা শুনে—যার মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতা, আদর্শ এবং ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে পড়ে।
🔹 উপসংহার:
জুমার দিন মুসলমানদের জন্য এক মহা নেয়ামত। এটি আত্মশুদ্ধি, গোনাহ মোচন, দোয়া কবুল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। আমাদের উচিত এ দিনকে যথাযথ মর্যাদা, সম্মান এবং আমলের মাধ্যমে কাটানো।
আসুন, আমরা সবাই জুমার দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করি এবং তা বাস্তব জীবনে অনুসরণ করি।