টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা
গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসই সূচক
ঢাকা, ১৮ মে: দেশের শেয়ারবাজারে চলমান টানা দরপতন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মুখে হতাশার ছাপ, বাজারে নেই আগ্রহ বা আস্থা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক। এই ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারো খুচরা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী।
বিগত ৫ আগস্টের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও শেয়ারবাজার রয়ে গেছে ব্যতিক্রম। যেখানে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও রপ্তানিতে কিছুটা গতি ফিরেছে, সেখানে শেয়ারবাজারে সূচক, বাজার মূলধন এবং তারল্য — সবকিছুই নিম্নমুখী।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত আট মাসে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স (DSEX) এক হাজার পয়েন্টেরও বেশি কমে গেছে। বর্তমানে সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। এর পাশাপাশি ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে।
বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিশ্চয়তা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনীহা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব এই ধসের মূল কারণ। এছাড়াও বাজারে সুশাসনের অভাব, পর্যাপ্ত প্রণোদনা না থাকা এবং নিয়মিত হস্তক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এক বিনিয়োগকারীর কণ্ঠে হতাশা:
মতিঝিলে অবস্থিত একটি ব্রোকার হাউসের সামনে কথা হয় খুচরা বিনিয়োগকারী হাসান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে আমি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছি। কিন্তু এবার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। প্রতিদিন শুধু লোকসান গুনছি।”
বাজারে তারল্য সংকট
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। প্রতিদিনের গড় লেনদেন এখন ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা কয়েক মাস আগেও ১২০০ কোটি টাকার বেশি ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতিমালার প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি, উচ্চ সুদের হার এবং ঋণসীমা সংকোচনের ফলে বাজারে তারল্য কমে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সরকারি ট্রেজারি বন্ড বা ব্যাংকে উচ্চ সুদের দিকে ঝুঁকছেন, যার ফলে পুঁজিবাজার আরও সংকটে পড়েছে।
বাজারে আস্থা ফেরাতে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা, কর সুবিধা, বাজার স্থিতিশীল রাখতে পুঁজিবাজার রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।