ইসলামি ডেস্ক রিপোর্ট
হজ—ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি, যা মুসলিম জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত ইবাদত। এটি এমন এক ইবাদত, যা শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক সব ধরণের সামর্থ্য থাকা ব্যক্তিদের জীবনে একবার পালন করা ফরজ। পবিত্র বাইতুল্লাহ তথা কাবাঘরের জিয়ারতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এই সুযোগ লাভ করা নিঃসন্দেহে একজন মুসলিমের জীবনে পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।
কুরআনের আলোকে হজের গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
“আর মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বাইতুল্লাহতে) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বের সকল সৃষ্টির মুখাপেক্ষী নন।”
— (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)
এই আয়াত থেকেই প্রতীয়মান হয়, হজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক রেওয়াজ নয়, বরং এটি একটি ফরজ ইবাদত, যা অস্বীকার করা কুফরির সামিল হতে পারে।
হাদিসের দৃষ্টিতে হজের মর্যাদা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল কথা ও গোনাহ থেকে বিরত থাকে, সে হজ থেকে এমন অবস্থায় ফিরে আসে যেন তার মা তাকে নতুন করে জন্ম দিয়েছে।”
— (সহীহ বুখারী, হাদিস ১৫২১)
অন্য একটি হাদিসে তিনি আরও বলেন:
“একটি পরিপূর্ণ হজের বদলা হলো জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।”
— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
কাবাঘরের জিয়ারতের সৌভাগ্য
বিশ্বের প্রতিটি মুসলমান দৈনন্দিন নামাজে যে কিবলার দিকে মুখ করে ইবাদত করেন, সেই কাবাঘর দেখার সৌভাগ্য সবাই পান না। কিন্তু যারা হজ বা ওমরার মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরিফ জিয়ারত করেন, তারা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
“নবী করিম (সা.) মদিনা থেকে হজে যাবার সময় বারবার বলতেন: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির আশায় হজে যাচ্ছি।’”
হজের তাৎপর্য ও শিক্ষা
হজ মানুষকে আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম এবং আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। হজের প্রতিটি রীতিতে রয়েছে গভীর তাৎপর্য—ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর কুরবানির নিদর্শন, হাজেরা (আ.)-এর সীমাহীন বিশ্বাস, সাফা-মারওয়ার দৌড়, আরাফাতের ময়দানে আত্মসমর্পণ—এসব সবই আল্লাহর নিকট আত্মনিবেদনের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত।
হজ পালনের সুযোগ যাদের নেই
যারা আর্থিক, শারীরিক বা নিরাপত্তার কারণে হজ করতে অক্ষম, তাদের জন্য হজ ফরজ নয়। তবে যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করে না, তাদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করে না, সে ইচ্ছা করলে ইহুদি হয়ে মরুক বা খ্রিস্টান হয়ে মরুক।”
— (সুনান তিরমিযি)
উপসংহার
হজ এমন এক ইবাদত, যা মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তাই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উচিত, জীবনে একবার হলেও এই ফরজ ইবাদত পালনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকা। হজ শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং এটি একটি আত্মশুদ্ধির সফর—যার মাধ্যমে মুসলমান ব্যক্তি তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের সফলতা অর্জন করতে পারে।