ঢাকাSaturday , 24 May 2025
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম ও জীবন
  8. বিনোদন
  9. বিশেষ প্রতিবেদন
  10. রাজনীতি
  11. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভাগে কোরবানি: শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?

Link Copied!

ধর্ম ডেস্ক ||
ময়মনসিংহ, ২৪ মে:
ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার বাসিন্দা মো. হাদিউর রহমান দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তার ভাইদের সঙ্গে যৌথভাবে কোরবানি দিয়ে আসছেন। অতীতে পৃথকভাবে কোরবানি দেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় এ পদ্ধতিই ছিল তাদের একমাত্র পথ। তবে বর্তমানে আল্লাহর রহমতে তিনি নিজস্ব সামর্থ্যে একটি পূর্ণ পশু কোরবানি দেওয়ার অবস্থানে পৌঁছেছেন। তা সত্ত্বেও পারিবারিক ঐক্য ও মা-বাবা-ভাইদের চাওয়ার কারণে তিনি যৌথ কোরবানির পক্ষেই রয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে তার মৌলিক প্রশ্ন—“বর্তমানে আলাদা কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য থাকার পরও যদি আমি ভাগে কোরবানি দিই, তাহলে কি আমার কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে? শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কি বৈধ?”

শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির বিধান

কোরআন ও হাদিসে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন—

“তোমার প্রতিপালকের সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।”
(সূরা কাউসার, আয়াত: ২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—

“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
(ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩১২৩)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কোরবানি করা সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভাগে কোরবানি করা কি এতে অন্তর্ভুক্ত?

যৌথ কোরবানির বৈধতা

কোরবানির পশু যদি বড় হয় (গরু, উট ইত্যাদি), তাহলে সর্বোচ্চ সাতজন ব্যক্তি শরিক হতে পারে, যার প্রত্যেকের নিয়ত হতে হবে কোরবানি। কেউ যদি নিছক গোশতের অংশ পাওয়ার জন্য যুক্ত হন, তাহলে তা বৈধ নয়।

হাদিসে এসেছে—

“আমরা হুদায়বিয়াতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এক উট সাতজন মিলে কোরবানি করেছি এবং এক গরুও সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছি।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮)

এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভাগে কোরবানি দেওয়া সুন্নাহর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যদি তা শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকে।

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভাগে কোরবানি

ফিকাহবিদগণ উল্লেখ করেছেন, যদি কারো পৃথক কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য থাকে, তবে আলাদাভাবে দেওয়া উত্তম। তবে, যৌথ কোরবানি করলেও ইবাদত বাতিল হবে না, বরং তা পূর্ণভাবে আদায় হবে—যদি নিয়ত কোরবানি হয় এবং শরিকদের মধ্যে কেউ গোশতের লোভে যুক্ত না হন।

ইমাম ইবনু আবিদিন (রহ.) বলেন—

“যদি কেউ সাত ভাগের এক ভাগ কিনে কোরবানি দেয় এবং তার নিয়ত থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাহলে সে কোরবানিদাতা হিসেবে গণ্য হবে। যদিও তার সামর্থ্য ছিল একটি পূর্ণ পশু কোরবানি করার।” (রদ্দুল মুহতার)

পারিবারিক ঐক্য এবং ইবাদতের সৌন্দর্য

ইসলামে পরিবারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও একত্রে ইবাদত করার মাধ্যমেই সমাজে ঐক্য গড়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে, একজন যদি সামর্থ্য থাকার পরও পারিবারিক সম্মিলনে শরিক হন, তবে তা ইবাদতের সৌন্দর্য ও সম্পর্ক রক্ষার একটি সুন্দর উদাহরণ হতে পারে।

উপসংহার

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভাগে কোরবানি দেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বৈধ, যদি নিয়ত থাকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। বরং পারিবারিক ঐক্য ও পরস্পরের প্রতি সম্মান রক্ষার বিষয়টিও ইসলামে প্রশংসনীয় বলে গণ্য হয়।

সুতরাং, মো. হাদিউর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, তার কোরবানি বৈধ এবং পূর্ণফলপ্রাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ।