নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটে বিপর্যস্ত ৬টি বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ তথ্য জানিয়েছেন।
গভর্নর বলেন, “যেসব ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, ভুয়া ঋণ বিতরণ, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হয়েছে, তাদের একীভূত করার মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে জনগণের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আর্থিক খাতের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে।”
জানানো হয়েছে, যেসব ৬টি ব্যাংক একীভূত হতে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে:
১. সাউথইস্ট ব্যাংক
২. ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
৩. ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড
৪. পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
৫. জনতা ব্যাংকের অধীন পরিচালিত একটি বিশেষায়িত বেসরকারি ইউনিট
৬. একটি শীর্ষ পর্যায়ের বেসরকারি ব্যাংক যার নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি
গভর্নর বলেন, “এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি বহু বছর ধরে মূলধন সংকটে ভুগছে। আমানতকারীদের টাকা আটকে গেছে, এবং ঋণখেলাপির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা লুপ্ত হয়েছে। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
সরকারি মালিকানায় আনার প্রক্রিয়া:
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এসব ব্যাংক একীভূত করার পর একটি নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে, যার মূলধন সরাসরি সরকার প্রদান করবে। নতুন প্রতিষ্ঠানটি হবে একটি হাইব্রিড মডেলে পরিচালিত সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায়, যাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে একীভূত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ব্যাংকিং বিশ্লেষকদের মত:
বেসরকারি ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে এই উদ্যোগ যেন শুধুমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও শক্তিশালী নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া:
সাধারণ মানুষ ও আমানতকারীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিলেও অনেকে এখনো শঙ্কিত, কারণ অতীতে একাধিক রক্ষাণাবেক্ষণ প্রকল্পও সফল হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আশ্বস্ত করেছে, “এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।”
উপসংহার:
বহুদিন ধরে চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির পর অবশেষে নতুন সরকার ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলার আওতায় আনতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সময়মতো বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে এই উদ্যোগ সফল হলে দেশের আর্থিক খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।