প্রিয় নবীর (সা.) ভাষ্যে নারীদের হজ—‘শ্রেষ্ঠ জিহাদ’
ধর্ম ডেস্ক:
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হজ। তবে পুরুষ ও নারীর হজের বিধি-বিধানে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা প্রতিটি হজযাত্রী নারীর অবশ্যই জানা উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের হজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, “তোমাদের (নারীদের) জন্য মাবরুর হজই হলো শ্রেষ্ঠ জিহাদ।” (সহিহ বুখারি)
এই বিশেষ মর্যাদা বিবেচনায় হজে নারীদের জন্য রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট বিধান ও সতর্কতা, যা অনুসরণ করা না হলে হজের কাঙ্ক্ষিত ফজিলত লাভ সম্ভব নয়।
নারীদের হজ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও সতর্কতা
🔹 মাহরাম ছাড়া হজ নয়:
ইসলামে নারীর জন্য মাহরাম (যে পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক জায়েজ নয়) ছাড়া হজ করা বৈধ নয়। রাসুল (সা.) বলেন, “কোনো নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া হজে যাওয়া জায়েজ নয়।” (বুখারি, মুসলিম)।
🔹 পরিচ্ছন্নতা ও পর্দা বজায় রাখা:
হজের প্রতিটি স্তম্ভে নারীদের পোশাক ও আচরণে শালীনতা ও পর্দা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নারীরা ইহরাম অবস্থায় মুখ ঢাকতে পারবেন না, তবে অন্য সময় পর্দা বজায় রাখতে হবে। নারীর পোশাক হতে হবে ঢিলেঢালা, অপ্রদর্শনীয় ও সুন্নাহসম্মত।
🔹 ইহরামের পার্থক্য:
পুরুষরা নির্দিষ্ট কাপড় দিয়ে ইহরাম বাঁধলেও নারীদের জন্য এমন কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই। তবে শালীন পোশাক পরিধান করে নিয়তে ইহরামে প্রবেশ করতে হয়। নারীরা মোজা ও হাতমোজা ব্যবহার করতে পারেন, মুখে কাপড় লাগানো যাবে না।
🔹 তাওয়াফের সময় সতর্কতা:
তাওয়াফের সময় ভিড় এড়ানো, মাহরামের কাছাকাছি থাকা, এবং বেহায়াপনা বা অনভিপ্রেত সংঘর্ষ থেকে দূরে থাকা নারীর জন্য জরুরি। নারীদের সাফা-মারওয়ার সাঈয়ের সময় সবুজ বাতির মধ্যে দৌড়ানোর বিধান নেই, এটি পুরুষদের জন্য।
🔹 রজস্বলা অবস্থায় বিধিনিষেধ:
যদি কোনো নারী হজের সময় হায়েজ (মাসিক) পেয়ে যান, তবে তিনি ইহরাম অবস্থা বজায় রেখে তাওয়াফ ছাড়া অন্যান্য হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। তাওয়াফ ক্বাবা মাসিক শেষে ঘোরা ফরজ হবে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-কে এভাবেই নির্দেশ দেন (সহিহ মুসলিম)।
🔹 আত্মসুরক্ষা ও নিরাপত্তা:
নারীরা যেন গুচ্ছভিত্তিক হজ করেন, মাহরাম বা নারীদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন না হন এবং রাতে নির্জন জায়গায় না থাকেন—এটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে মানা উচিত।
আধুনিক ব্যবস্থাপনায় নারীদের সুযোগ-সুবিধা
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় নারীদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা, মহিলা হজ গাইড, হেল্প ডেস্ক ও মেডিকেল সুবিধা রাখা হয়েছে। নারীরা যেন নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারেন, সেজন্য প্রশাসনও সচেষ্ট।
উপসংহার
হজ যেমন ফরজ ইবাদত, তেমনি নারীদের জন্য এটি আলাদা মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। এটি যেন কোনো ত্রুটি বা অনবধানতায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য নারীদের হজের নির্দিষ্ট বিধান সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও তা অনুসরণ করা একান্ত জরুরি।