আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ সুদানে সরকারি বাহিনী ও প্রেসিডেন্ট সালভা কিইরের বিরোধী যোদ্ধাদের মধ্যে চলমান সহিংসতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অন্তত ৭৫ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘ এই সহিংসতাকে গভীর উদ্বেগজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
সংঘর্ষের বিবরণ
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ইউনিটি ও আপার নাইল রাজ্যে সংঘর্ষ সবচেয়ে তীব্র। সরকারি সেনাবাহিনী এবং বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, সম্পদ দখল ও জাতিগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। তবে সম্প্রতি তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ফলকার তুর্ক বলেন, “এই সহিংসতা শুধু প্রাণহানি নয়, বরং নাগরিকদের বসতভিটা ধ্বংস, নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা এবং শিশুদের অপহরণের মতো অপরাধকেও বাড়িয়ে তুলেছে।”
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সংঘর্ষ-সংক্রান্ত ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কিছু ঘটনায় নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
উদ্বেগ ও আহ্বান
জাতিসংঘ হাইকমিশনার তুর্ক বলেন, “দক্ষিণ সুদানের সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে দ্রুত একটি শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে হবে। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা তাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব।”
তিনি বলেন, “এ ধরনের সংঘর্ষে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে বা অংশ নিয়েছে, তাদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
দক্ষিণ সুদানের প্রেক্ষাপট
২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দক্ষিণ সুদান নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতিগত সহিংসতার মুখে পড়ে। প্রেসিডেন্ট সালভা কিইর ও তার সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি রিয়েক মাচারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং বিদ্রোহই মূলত এই সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু।
যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় দেশটিতে মানবিক সংকট দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
সংক্ষেপে:
দক্ষিণ সুদানে সরকারি বাহিনী ও বিরোধীদের সংঘর্ষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৭৫ জন বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, নাগরিকদের ওপর হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
👉 বাকিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।